৩০ এপ্রিল, ২০২৫ | ১৭ বৈশাখ, ১৪৩২ | ১ জিলকদ, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. আবদুল হাই এর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী ২৯ এপ্রিল   ●  লুৎফুর রহমান কাজলের মা সাবেক এমপি সালেহা খানমের ইন্তেকাল করেছেন   ●  টেকনাফে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে ডাকাতদলের গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১   ●  সিবিআইইউ’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়েছে।   ●  গভীর রাতে পাহাড়ের মাটিভর্তি একটি ড্রাম ট্রাক( ডাম্পার) জব্দ করেছে কক্সবাজার বনবিভাগ   ●  অস্ত্র উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিলে জেলার শ্রেষ্ঠ হলেন এসআই খোকন কান্তি রুদ্র   ●  উখিয়ায় সাংবাদিক জসিম আজাদের জমি ও বসতবাড়ি দখলের চেষ্টায় হামলা   ●  কৃষকদল নেতা পরিচয়ে জমি দখল গুলি বর্ষণ আটক ১   ●  উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন   ●  প্রথম ধাপে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার

সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনে লাখো মানুষের মিলন উৎসব

বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র, এটি ধরে রাখতে হবে- নারায়ন চন্দ্র চন্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখো ভক্তের উপস্থিতি ও আনন্দ-বেদনার মিশেলে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিদায় দেওয়া হলো দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গাকে। আর এরই মধ্য দিয়ে শেষ হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। শনিবার ভক্তরা সজলচোখে বিদায় দিয়েছেন মাকে, আগামী বছর ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশায়।
শনিবার বিকাল তিনটা থেকে সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে প্রতিমা নিয়ে জড়ো হতে থাকে ভক্তরা। পরে সৈকতের বালিয়াড়িতে প্রতিমাকে ঘিরে পূজা অর্চনা করে ভক্তরা। এসময় খাসা ও ঢাকঢোল পিটিয়ে উৎসবে মুখর হয়ে উঠে সৈকতের বালিয়াড়ি।
তবে এ দিকে গত পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের শেষ দিনে গতকাল মন্ডপে মন্ডপে নবমি ও দশমীর বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তারপর স¤পন্ন হয় দেবীর শাস্ত্রীয় বিসর্জন। কক্সবাজারের হিন্দুধর্মাবলম্বী ব্যক্তিরা বিকেলে শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা বিসর্জন দেন বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে। এতে যোগদেন দেশী-বিদেশী পর্যটকও। প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে বেলায় তিনটা থেকে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষের সমাগম শুরু হয়। বিকেল পাঁচটার আগেই কানায় কানায় ভরে যায় সৈকত। বিসর্জনের আগ পর্যন্ত সৈকতের বালুচরে রাখা মা দুর্গার প্রতিমা ঘিরে চলে ভক্তদের শেষ আরাধনা। বিকেল সোয়া পাঁচটায় মন্ত্রপাঠের পর মাইকে প্রতিমা বিসর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ঝরতে শুরু করে ভক্তদের অশ্রু। এরপর, সদর উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ৩০টি, কক্সবাজার শহর পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ১১টি, চকরিয়া উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃতে ৪৪টি, পেকুয়া উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ৬টি, উখিয়া উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ৪টি, রামু উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক তপন মল্লিক, যুগ্ন আহবায়ক সুদীপ শর্মা, জনি দেয়ানজি, মাস্টার অজিত রুদ্র ও পাইলট চক্রবর্তীর নেতৃতে ১৭টি মন্ডপসহ খুরুশকুল, ঈদগাঁও, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলী কদম, গর্জনিয়া থেকে সৈকতে তিন শতাধিক প্রতিমা একে একে বিসর্জন দেওয়া হয় বঙ্গোপসাগরের জলে।
কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রনজিত দাশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বিজয়া দশমীর বিসর্জন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ।
নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, ধর্মীয় শাস্ত্র অনুযায়ী এবার মা দুর্গা এসেছেন নৌকায় চড়ে। চলে যাচ্ছেন ঘোড়ায় চড়ে। মা দুর্গা আমাদের কাছে নৌকা রেখে যাচ্ছেন। সেই নৌকাকে আগামি নির্বাচনে বিজয়ী করে শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে হবে। কারণ যারা এদেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করেছে; জঙ্গিবাদের সৃষ্টি করেছে তাদেরকে সমূলে বিনাশ করতে হলে শেখ হাসিনা সরকারের বিকল্প নেই।
হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষ সব সময় আমাদেরকে বিভিন্নভাবে আক্রমন করার চেষ্টা করে। নানা অপবাদ দিয়ে উস্কানি দেয়ার অপচেষ্টা করে। তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ নষ্ট করতে চায়। এটার বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, সংসদ সদস্য আশেকউল্লাহ রফিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহম্মদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, পুলিশ সুপার ড.একেএম ইকবাল হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা, ট্যুরিষ্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কানিজ ফাতেমা আহমেদ। এতে আরো বক্তব্য রাখেন পৌরসভার মেয়রের প্রতিনিধি কমিশনার হেলাল উদ্দিন কবির, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের ট্রাষ্টি অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন, সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক দাশ ও শহর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ডা. চন্দন দাশ। পরে মন্ত্রপাঠ করেন স্বরসতী বাড়ির প্রধান পুরোহিত স্বপন ভট্টাচার্য্য।


এদিকে প্রতিমা বিসর্জন নিরাপদ করতে জেলা ও ট্যুরিষ্ট পুলিশ বেলা দুইটার পর থেকে সৈকতে নামার প্রধান সড়কে যানবাহন ও রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ কারণে হাজার হাজার মানুষকে হেঁটে সৈকতে যেতে এবং প্রতিমা বিসর্জনের পর সন্ধ্যায় সেখান থেকে ফিরতে হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ স¤পাদক বাবুল শর্মা জানান, এ বছর জেলায় ২৯৩ টি মন্ডপে পূজা উদযাপিত হয়। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ প্রতিমা কক্সবাজার সৈকতে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রনজিত দাশ জানান, ‘প্রতি বছর প্রতিমা বিসর্জনের দিনে লাখো মানুষের সমাবেশ হয় সৈকতে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এটি দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান।’ তিনি বলেন,‘সৈকতের এই প্রতিমা বিসর্জনের উৎসবে দেড় লাখের বেশি মানুষের সমাগম ঘটেছে’। সুষ্ঠুভাবে প্রতিমা বিসর্জনসহ শারদীয় দুর্গাপূজা সম্পন্ন হওয়ায় জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার পৌরসভা, জেলা পরিষদ, পুলিশ, র‌্যাব, ট্যুরিষ্ট পুলিশ, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রনজিত দাশ।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।