বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্মবাজার সদরের কাছাকাছি এলাকা পিএমখালিতে মোরশেদ আলী ওরফে বলী মোরশেদ (৩৮)’র। হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ‘পাওয়ার আলীর’ ভাই দিদারসহ ৩ জন আটক করেছে সদর মডেল থানা পুলিশ। শুক্রবার রাতে কক্সবাজার সদর মডেল থানা ওসি (তদন্ত) মো.সেলিম উদ্দিন তিনজনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে তিনি থানার বাহিরে থাকায় তৎক্ষানিক আটককৃতদের নাম বলতে পারেনি। অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে আটককৃত তিনজনের মধ্যে একজন ‘পাওয়ার আলীর’ ভাই দিদার রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কক্সবাজার সদরের পিএমখালীর চেরাংঘর এলাকায় মধ্যযুগীয় কায়দার তার উপর দুর্বৃত্ত হামলার ঘটনা ঘটে। আর রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসিওতে তার মৃত্যু হয়। তিনি এলাকায় ‘অন্যায়ের প্রতিবাদকারি’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
নিহত মোরশেদ আলী পিএমখালী ইউনিয়নের মাইজপাড়ার মৃত মাওলানা ওমর আলীর ছেলে।
শুক্রবার আছরের নামাজের পর নিজ এলাকায় জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
নিহতের ভাই জয়নাল আবেদীন ও আইনজীবী জাহেদ আলী জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ভাই মোরশেদ ইফতার অনুষঙ্গ কিনতে চেরাংঘর বাজারে যান। সেখানে স্থানীয় মাহমুদুল হক, জয়নাল, কলিম উল্লাহসহ তাদের গোষ্ঠির অন্তত ১৫-২০ জন লোক লোহার রড, ছুরি ও লাঠি নিয়ে এরশাদ আলীর উপর হামলে পড়ে। অকস্মাৎ হামলা ও রোজায় ক্লান্ত মোরশেদ হতবিহ্বল হয়ে মাঠিতে পড়ে যায়। ঘটনা প্রত্যক্ষ করা অনেকে জানিয়েছেন, তখন তিনি (মোরশেদ)- হামলাকারীদের বলছিলেন, সারাদিনের রোজায় বেশি ক্লান্ত- মারতে চাইলে ইফতারের পর মারিও। রোজার দোহাই দিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রাণ ভিক্ষার আকুতিতেও নরপিশাচদের মন গলেনি।
তারা মোরশেদকে মধ্যযুগীয় বর্বর কায়দায় পিটায় ও কুপিয়ে প্রায় ১৫-২০ মিনিট উপর্যুপরি আঘাতের পর চলে যায়। প্রহারকারিরা স্থানীয় ভাবে চিহ্নিত অপরাধী হওয়ায় কেউ তাদের বাঁধা দিতে আসেনি। তাছাড়া হামলাকারীদের একজন নাকি উচু গলায় বলছিলেন, উপরের নির্দেশে তাকে মেরে ফেলা হচ্ছে- কেউ এগিয়ে আসবে না।
স্থানীয়রা মুমূর্ষু মোরশেদকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে আইসিওতে স্থানান্তর করার পর সেখানকার চিকিৎসকরা রাত ৮টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মোরশেদের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, সরকারি একটি সেচ প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে ইজারা নিয়ে পরিচালনা করে আসছিলেন মোরশেদের পরিবার। সেই সেচ প্রকল্পের পানির স্কিম নিয়ে হামলাকারিদের সাথে বেশ কিছুদিন ধরে মোর্শেদ আলীর বিরোধ চলছিল। হামলাকারিরা চাষীদের ভোটে নির্বাচিত স্কিম পরিচালনা পাম্পের পাশে জোরপূর্বক নিজেদের পাম্প বসানো বা চলমান প্রকল্প দখল করতে চেয়েছিল। কিন্তু মোরশেদ তাতে বাধা দেন। এ নিয়ে উভয় বিবাদ চলে আসছিলো।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, মাহমুদুল হক মেম্বার, জয়নাল আবেদিন হাজারি, কলিম উল্লাহ, আবদুল মালেকসহ হামলার মূল নির্দেশদাতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা আলাল।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি শেখ মুনীর-উল-গীয়াস বলেন, খবর পেয়ে সদর হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের পৃথক টীম। মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শুক্রবার আছর নামাজের পর জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়েছে। এখনো মামলা হয়নি, তবে পুলিশ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তাদের ছাড় দেয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন ওসি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।