৫ অক্টোবর, ২০২৫ | ২০ আশ্বিন, ১৪৩২ | ১২ রবিউস সানি, ১৪৪৭


শিরোনাম
  ●  কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্কিলস অ্যান্ড ইনোভেশন কম্পিটিশন অনুষ্ঠিত   ●  আলোচিত ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে লুটপাট, পরে রফাদফা!   ●  দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ   ●  কক্সবাজারে ভূমি নিবন্ধনে আকাশচুম্বী বর্ধিত উৎসেকর বাতিল, প্রসংশায় পঞ্চমুখ সালাহউদ্দিন আহমদ   ●  হলদিয়ায় ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে উধাও ৩ যুবক   ●  দুর্ধর্ষ প্রতারক দিদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি   ●  ইয়াবাসহ পুলিশে সোপর্দ, চোর সন্দেহে চালান, এলাকায় ক্ষোভ   ●  শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান   ●  “প্লাস্টিক উৎপাদন কমানো না গেলে এর ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব নয়”   ●  নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কক্সবাজারে তাঁতীদলের খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন

চকরিয়ায় বনাঞ্চলের ভেতর গড়ে তোলা অনুমোদন বিহীন ইটভাটা ধ্বংস করছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের জীববৈচিত্র্য


কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ও লামা আলীকদম সড়কের কুমারী কবিরের দোকানের একটু ভেতরে বনাঞ্চলের পাশ ঘেঁষে গড়ে তোলা অনুমোদন বিহীন ৫ ইটভাটা এ বছরও চালু করা হয়েছে। এসব ইটভাটার নির্গত কালো ধোঁয়ায় বিষিয়ে উঠেছে এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ। বাতাসের সাথে নির্গত ধোঁয়া মিশে গিয়ে বর্তমানে চরম হুমকির মুখে পড়েছে দেশের প্রথম কক্সবাজারের ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের জীববৈচিত্র্য।
বির্বণ হচ্ছে পার্কের সবুজ গাছপালা। ইটভাটার ধোঁয়ার কার্বন ধুলা পানিতে পড়ে পার্কের জলজপ্রাণি। ভাটা গুলো বনাঞ্চলের ভেতরে গড়ে তোলার কারনে সাফারি পার্ক ও পার্ক লাগোয়া বনাঞ্চলের মুল্যবান গাছপালা উজার হচ্ছে। সরকারী সংরক্ষিত ও সামাজিক বনায়নের মুল্যবান ছোট-বড় গাছপালা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন ইটভাটা গুলোর কারনে বিগত কয়েকবছরে ওই এলাকার বেশিরভাগ বনাঞ্চল বৃক্ষ শুন্য হয়ে গেছে। প্রতিবছর নতুন নতুন এলাকায় চলছে ভাটা লাগোয়া কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ ও লামা বনবিভাগের পাহাড় কাটার মহোৎসব। পাহাড় কেটে নেয়া মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে ইট তৈরীতে।
স্থানীয় প্রশাসন ও বনবিভাগের সংশ্লিষ্টরা প্রতিবছর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর ইটভাটা স্থাপনের সুযোগ দয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের উৎকোচ। এ অবস্থার কারনে বনাঞ্চলের ভেতর থেকে ইটভাটা গুলো অপসারন করা হচ্ছেনা। ফলে প্রতিবছর ওই এলাকায় প্রাকৃতিক ভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ।
জানা গেছে, ২০০০সালে সরকার উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বগাচত্বর এলাকায় ৯শত হেক্টর বনাঞ্চলকে বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক ঘোষনা করেন। পরে পার্কের সৌন্দর্য্য বর্ধন ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে নানা প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় জীবজন্তুর সংগ্রহ করেন। এসব প্রাণীর আবাসস্থল সৃষ্টি, বাউন্ডারি, আলাদা বেষ্টনী, রেষ্ট হাউস, বাংলো, মিউজিয়াম, ষ্টুডেন্ট ডরমেটরী, অকির্ড হাউজ, এনিমেল ফিডিং স্পট, পর্যবেণ টাওয়ার, বানায়ন, আভ্যন্তরিন সড়কসহ নানাস্থাপনা, পশুপাখির মুরাল নির্মাণ করে মনোরম ও দৃষ্টি নন্দন করে তুলেছে।
স্থানীয়রা জানায়, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের বনাঞ্চল ঘেঁেষ বগাছড়ি ও কালাপাড়া এলাকায় গত কয়েকবছর আগে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর গড়ে তুলেন একাধিক অনুমোদন বিহীন ইটভাটা। ওই সময় তারা শাসকদলের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অনেক নেতা ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে পরিবেশ বিপর্যয়ের মাধ্যমে ইটভাটার ব্যবসা চালিয়ে যান। ফাঁিসয়াখালী ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত বছর পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এলাকা পরির্দশন করে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর ইটভাটা স্থাপনে বাঁধা দেন। ওইসময় ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার হুকার দেন। কিন্তু এবছর ভাটা মৌসুম শুরু হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজনের এখনো দেখা মেলেনি।
স্থানীয়রা জানান, এ সুযোগ ওই এলাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর এবছর ফের পাঁচটি ইটভাটা স্থাপন করেছেন পিয়ারুল ইসলাম, শমশু উদ্দিন ও নজু মাষ্টারের নেতৃত্বে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা। দুটি ড্রাম সিমনি ও তিনটি উচু চিমনি দিয়ে এসব ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এসব ইট ভাটায় জালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ভাটা লাগোয়া সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মুল্যবান গাছপালা। অভিযোগ উঠেছে, এসব ইটভাটা স্থাপনে পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগ ও প্রশাসনের কোন ধরনের অনুমতিপত্র নেই।
সরেজমিন দেখা গেছে, এসব ইটভাটা সমুহ সাফারী পার্ককে তিন পয়েন্ট থেকে ঘেরাও করে রেখেছে। এসব ইট ভাটার চিমনি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার কার্বন ধুলা পড়ে সাফারি পার্ক ও পার্ক লাগোয়া বনাঞ্চলের গাছপালা বিবর্ণ হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে সাফারি পার্কের জীববৈচিত্র্য। সরকারী বনাঞ্চলের পাহাড় কেটে ভাটা গুলোতে ইট তৈরীর জন্য মাটিও নেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, ইটভাটা গুলোর কারণে প্রতিবছর সাফারি পার্কের বহু বিলুপ্ত প্রায় পশুপাখি মারা যাচ্ছে।
পার্কের ভেটিরিনারী বিভাগের সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, পার্কের কাছাকাছি এলাকায় এসব ইটভাটা গুলো গড়ে তোলার কারনে বর্তমানে পার্কের জীবজন্তুর মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় পশুস্বাস্থ্যও রয়েছে চরম হুমকিতে। তাদের দাবি, ইট ভাটার নিগৃত কালো ধোঁয়ায় বনাঞ্চল উজাড় হওয়ার কারনে পাশে পশুপাখির চারণভূমি ও আবাসস্থল ধবংস হচ্ছে। এছাড়াও এখানে মাটির উর্বর শক্তি বিলুপ্ত হচ্ছে। এতে পার্কের গাছপালা স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠছে না।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.আতিক উল্লাহ প্রিয় চট্টগ্রামকে বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কার্বণ ধুলা পানিতে পড়লে জলজ প্রাণির ক্ষতি করে, নষ্ট হয় গাছের গ্রুথ এমনকি মাটি হারিয়ে পেলে উর্বরা শক্তি।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।