ইমাম খাইর, কক্সবাজার
কক্সবাজার জেলায় বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক করোনাকালে সরকারি কোন ধরণের সহায়তা পায় নি। করোনার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যে অনেকে কর্ম হারিয়েছে। বেকার সময় কাটছে তাদের। এসব অভিযোগ জেলার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের।
কক্সবাজার জেলা শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের ফেডারেশনভুক্ত ১৭টি সংগঠন রয়েছে, যারা বিভিন্ন স্তরে শ্রমজীবী হিসেবে কাজ করে। তারা চরম অবহেলিত।
আমাদের তথ্য মতে, কক্সবাজার জেলায় বিভিন্ন সেক্টরে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক রয়েছে, করোনাকালে তাদের চরম দুর্দিন যাচ্ছে। অনেকের বেতন-ভাতা বন্ধ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিতে কর্মচারী ছাঁটাই চলছে।
তিনি বলেন, শ্রম অধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। করোনার এই দুর্দিনে স্থানীয় প্রশাসন শ্রমজীবীদের কোন ধরণের প্রণোদনা দেয় নি।
শ্রমিক নেতা গিয়াস উদ্দিন আহমেদ আক্ষেপ সুরে বলেন, বিগত লকডাউনে হতদরিদ্রদের অার্তনাদ শুনেছি।
খেটে খাওয়া মানুষের পেটের খবর নেয় নি কেউ। এ বছরও একই দৃশ্য। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান, সাপ্তাহিক ছুটি ও কর্মঘন্টা নির্ধারণ এই তিনটি দাবি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, শ্রমিক সমাজ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে এখনো বঞ্চিত। পর্যটন শহরের আবাসিক হোটেলগুলোর শ্রমিকদের খোঁজ নেয়ার যেন কেউ নাই। করোনা প্রভাবে কাজকর্ম বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা বেকার।
তিনি বলেন, কলকারখানা ও উৎপাদন সেক্টরগুলোতে মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব এক ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। মাঝে মধ্যেই শ্রমিকরা শোষণ, জুলুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাস্তায় প্রতিবাদ জানালেও তাদের ন্যায্য অধিকার এখনো নিশ্চিত হয়নি। করোনাকালে সরকারের তরফ থেকর শ্রমিকদের প্রণোদনার দাবি দেন কলিম উল্লাহ।
এদিকে, বিভিন্ন আবাসিক হোটেল-রেস্টুরেন্ট, শিল্পকারখানা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক মজুরী ১০ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবী তুলেছে শ্রমিকরা।
একই সাথে যেনতেনভাবে শ্রমিক ছাঁটাই ও মালিক দ্বারা শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ এবং সাপ্তাহিক একদিন ছুটি সরকারীভাবে ঘোষণারও দাবী করা হয়।
কক্সবাজার দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন বলেন, লকডাউনে বোনাস তো দূরের কথা, অধিকাংশ শ্রমিক বেতনও পায় নি। কর্মহারা হয়ে গেছে অনেকে। পবিত্র রমজান মাসে হলেও সবার সাধ্য মতো শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান সাহাব উদ্দিন।
কক্সবাজার জেলা শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমিনুল হক বলেন, আধুনিক পৃথিবীর রূপ-লাবণ্যতার পেছনে রয়েছে শ্রমজবী মানুষের কৃতিত্ব। নতুন নতুন সভ্যতা গড়ে তোলার কারিগর মেহনতি শ্রমিকরা। আজ আক্ষেপের সাথে বলতে হয় সভ্যতার উদয় যে শ্রমজীবী মানুষের রক্ত ঘামে রচিত হয় তারা আজ সর্বদা সমাজ রাষ্ট্রে উপেক্ষিত, অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত। কালের আবর্তনে তাই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গড়ে উঠেছে অসংখ্য আন্দোলন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা বাংলাদেশে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের সংগ্রাম চালাচ্ছি এবং আগামী দিনেও অবিরাম চলবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, শ্রমিকদের তো গত বছর সরকারিভাবে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে জানি। এবছর কি করা যায় দেখি। প্রয়োজনে শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলবেন বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
প্রসঙ্গত, ১৮৮৬ সালের ১লা মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে ৮ ঘণ্টা শ্রমদিনের দাবীতে আন্দোলনরত শ্রমিকের ওপর গুলি চালানো হলে ১১ শ্রমিক মারা যায়।
১৮৯০ সালের ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিষ্ট কংগ্রেসে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষনা করা হয় এবং তখন থেকে অনেক দেশে দিনটি শ্রমিক শ্রেনী কর্তৃক উদযাপিত হয়ে আসছে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় এইদিন পালিত হয় না।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।