আতিকুর রহমান মানিকঃ কক্সবাজার জেলাব্যাপী সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার বাগদা চিংড়ি ঘের ও মৎস্যখামার সমূহে তেলাপিয়া মাছ চাষে রীতিমত বিপ্লব ঘটিয়েছেন খামারীরা। ঘেরের মৃদু লবনাক্ত পানিতে ইতিপূর্বে চাষকৃত তেলাপিয়া মাছ এখন বড় হয়ে আহরনের উপযোগী হয়েছে। এখন ঘের থেকে প্রতিদিন শত শত কেজি তেলাপিয়া মাছ আহরন করে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে।
দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী-কুতবদিয়াসহ পেকুয়া, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও সদর উপজেলায় তেলাপিয়া চাষের বিভিন্ন বাণিজ্যিক খামার ঘুরে জানা গেছে, সমুদ্র উপকুলীয় এসব বিস্তীর্ন এলাকায় লবন উৎপাদন মৌসুমে শেষে বিগত মে মাসে প্রজেক্টে পানি ঢুকিয়ে বাগদা চিংড়ি চাষ শুরু হয়। ঘেরে চিংড়ি পোনা মজুদ করা হয়। চাষীরা জানান, মজুুুুদকৃত পোনা আহরনযোগ্য হওয়ার আগেই গতবর্ষায় প্রবল বৃষ্টিজনিত কারনে ক্রমাগত পাহাড়ী ঢল ও উচ্চ মাত্রার সামূদ্রিক জোয়ারে সিংগভাগ ঘের প্লাবিত হয়। ক্ষতিগ্রস্থ এসব ঘের মেরামতের পর আবারো কয়েক দফা বন্যায় প্লাবিত হয়ে ব্যাপক বিপর্যয়ের মুখে পড়েন চাষী-খামারীরা। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় মোরা’র তান্ডবেও প্লাবিত হয় অনেক প্রজেক্ট। একই সময়ে মৎস্য এ প্রাণীসম্পদ মন্ত্রনালয় কর্তৃক গভীর সাগরে ডীপ-সী ট্রলিং বন্ধ থাকায় বাগদা চিংড়ি হ্যাচারী সমূহ প্রয়োজনীয় মা-চিংড়ি না পেয়ে উৎপাদন চালু রাখতে পারেনি। ফলে খামারীরা চিংড়ি পোনা না পেয়ে ঘেরে তেলাপিয়া মাছের পোনা মজুদ করেন। মনোসেক্স, গিফট ও রেড তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির তেলাপিয়া মাছ মজুদ করেন। এরপর নিয়মিত তদারকি ও পরিচর্যার ফলে এসব মাছ এখন আহরন উপযোগী হয়েছে। অনেক ঘেরে গিফট ও রেড তেলাপিয়া বাচ্চাও দিয়েছে। এখন আহরন করে এসব মাছ বাজারজাত করা হচ্ছে। বিগত ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর ২২ দিন ব্যাপী মা-ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমের সময় যখন সাগরে সবধরনের মাছ আহরণ বন্ধ ছিল, তখন বাজারে প্রাত্যহিক মাছের চাহিদা মিটিয়েছে এসব তেলাপিয়া মাছ। সদর উপজেলার পশ্চিম গোমাতলীর উদ্যোক্তা হান্নান মিয়া জানান, তিনমাস আগে প্রজেক্টে চাষ করা তেলাপিয়া পোনা এখন প্রতিটা গড়ে ২৫০ গ্রাম ওজনের তেলাপিয়া মাছে পরিনত হয়েছে। এসব মাছ এখন সুলভ মূল্যে ১০০-১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান তিনি। অভিজ্ঞ বাবুর্চি এনায়েত উল্লাহ সিকদার জানান, বিয়ে, ফাতেহা-জিয়াফত ও খাওয়া-দাওয়া সংক্রান্ত অন্যান্য আয়োজনে ফ্রাই আইটেম হিসাবে প্রমান সাইজের আস্ত তেলাপিয়া মাছ ভাজা খুব মানানসই ও সাশ্রয়ী।
এভাবে জনগনের প্রয়োজনীয় আমিষের চাহিদা মিটিয়ে চলছে এসব তেলাপিয়া মাছ। বাগদা চিংড়ি ঘেরে সাথীফসল হিসাবে তেলাপিয়া মাছ চাষ করে এখন লাভের মুখ দেখছেন উদ্যোক্তা ও চাষীরা। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ( সদর) ডঃ মঈন উদ্দীন আহমদ জানান, জেলায় উপকূলীয় ৫১৮৮ টি ঘেরে মোট ৪১ হাজার ৩৬৭ হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হয়েছে। খামারী হামিদ জানান, এসব ঘেরে সাথী ফসল হিসাবে তেলাপিয়া মাছ চাষ করেছেন চাষীরা। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ডঃ মোঃ আবদুল আলীম বলেন, চলতি বছর চিংড়ি উৎপাদন মৌসূম শুরু হওয়ার পর থেকে চাষীদের সার্বক্ষনিক প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ২০১৬ সালে জেলায় ২২ হাজার ৩০২ মেট্রিক টন বাগদা চিংড়ি উৎপাদিত হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ বছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ঘেরে চিংড়ির পাশাপাশি সাথী ফসল হিসাবে তেলাপিয়া মাছ চাষে সফলতা পেয়েছেন চাষীরা। চিংড়ি ও মৎস্য চাষ বিষয়ক প্রযুক্তি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্রিসেন্ট এ্যাকোয়া কনসালটেন্সি সূত্র জানায়, নিয়মিত খাদ্য প্রয়োগ ও পরিচর্যা করলে ৭০/৭৫ দিনেই তেলাপিয়া মাছ আহরণোপযোগী হয়।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।