৩ নভেম্বর, ২০২৫ | ১৮ কার্তিক, ১৪৩২ | ১১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭


শিরোনাম
  ●  চিকিৎসা বিজ্ঞানে উখিয়ার সন্তান ডাঃ আব্দুচ ছালামের উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন   ●  ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীন পরিবার, চার সন্তান স্কুলে যাওয়া বন্ধ   ●  রামুতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা রিজনের নেতৃত্বে এক ব্যক্তির দোকান দখলের অভিযোগ, চাঁদাবাজি মামলায় জিটু কারাগারে   ●  গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে হুমকি অভিযোগ ৪ এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে   ●  কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্কিলস অ্যান্ড ইনোভেশন কম্পিটিশন অনুষ্ঠিত   ●  আলোচিত ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে লুটপাট, পরে রফাদফা!   ●  দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ   ●  কক্সবাজারে ভূমি নিবন্ধনে আকাশচুম্বী বর্ধিত উৎসেকর বাতিল, প্রসংশায় পঞ্চমুখ সালাহউদ্দিন আহমদ   ●  হলদিয়ায় ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে উধাও ৩ যুবক   ●  দুর্ধর্ষ প্রতারক দিদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

‘এ সম্মান বাংলার মানুষের’

images_82022

অর্জিত সকল সম্মান বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা যতটুকু উন্নয়ন করেছি, তার সবটুকুই বাংলার মানুষের দান। তাই আজ আমাকে যে সম্মান দেওয়া হয়েছে, তা বাংলাদেশের সকল মানুষের প্রতি আমি উৎসর্গ করছি।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন। এর আগে, তার হাতে গণসংবর্ধনা স্মারক তুলে দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক।

শেখ হাসিনা তাকে গণসংবর্ধনা দেওয়ার জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি ভাষণের শুরুতে বাংলাদেশ গঠনে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনে তার সরকার কাজ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শুক্রবার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর হাতে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ শামসুল হক সংবর্ধনা স্মারক তুলে দেন।

প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনা স্মারক দেওয়ার পর সংবর্ধনার মানপত্র পাঠ করেন এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এর আগে, অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্য রাখেন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সভাপতি সৈয়দ শামসুল হক। পরে তার রচিত ও আলাউদ্দিন আলীর সুরে একটি সংগীত পরিবেশন করা হয়। সংগীত শেষে নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপার নেতৃত্বে একটি দলীয় নৃত্য পরিবেশন করা হয়।

ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের’ জন্য জাতীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে নাগরিক সংবর্ধনা মঞ্চে উপস্থিত হন। বিকেল সাড়ে ৩টায় এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের বিভিন্ন স্তরের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, ‘বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করার জন্য যা কিছু করা দরকার, যতো আত্মত্যাগ দরকার, সব আমরা করবো। আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, সেই ঘাতকের দল, যারা শুধু আমার পিতাকে কেড়ে নেয়নি, কেড়ে নিয়েছিল বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্খাকে, কেড়ে নিয়েছিল বাংলার মানুষের মাথা উঁচু করে বাঁচার সকল সম্ভাবনাকে, সেই খুনিদের বিচার ইনশাআল্লাহ বাংলার মাটিতে এক দিন আমরা করবোই।’

তিনি বলেন, ‘১৯৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছিল, আমি তখন বিদেশে। আমি বুঝতে পারছিলাম না, কোথায় থাকব, কি করব? তবে লক্ষ্য স্থির করেছিলাম, বাংলাদেশ যে ৭৫ এর পর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ হারিয়েছে, জাতির পিতাকে হত্যা করে বাঙালীর মর্যাদা বিশ্বসভায় ভুলণ্ঠিত করা হয়েছে, সে মর্যাদা আবারও আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই আমি আবারও সবকিছু ফেলে বাংলার মানুষের জন্য ফিরে এসেছিলাম।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে দেশের মানুষকে আমার বাবা মনপ্রাণ দিয়ে এত ভালোবেসেছিলেন, জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় কারাগারে কাটিয়েছেন বাংলার মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে, দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম আর নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ, এত আত্মত্যাগ তো কখনো বৃথা যেতে পারে না। ২১ বছর পর আমরা সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। বাংলাদেশ ঘিরে পিতার যে স্বপ্ন, সংসারের বড় সন্তান হিসেবে সবটা না হলেও অনেক কিছুই আমার জানা-বোঝা সম্ভব হয়েছিল। তাই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য, বাংলার কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য একের পর এক চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘একটি জাতির যদি কোনো দিকনির্দেশনা না থাকে, তাহলে সে জাতি সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। আমরা বাঙালী জাতিকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এগিয়ে নেওয়ার জন্য রূপকল্প ঘোষণা করেছি। অর্থনৈতিক নীতিমালা গ্রহণ করেছি। তা বাস্তবায়নের কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমাদের যে অগ্রযাত্রা, ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে তা ভুলণ্ঠিত হয়ে যায়। ২০০৯ সালে বাংলার মানুষ আবারও আমাদের নির্বাচিত করে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃতজ্ঞতা জানাই, জাতির পিতা যখন স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি করেছিলেন এবং ১৯৭৪ সালে স্থল সীমানা চুক্তি করেছিলেন এবং সেই চুক্তি করার পর তিনি ১৯৭৪ সালেই নভেম্বর মাসে আমাদের জাতীয় সংসদে সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে তা অনুমোদন দিয়ে যান। কিন্তু ভারত তা অনুমোদন দিতে পারেনি। দীর্ঘ ৪০ বছর পর আজ ভারত সরকার তাদের জাতীয় সংসদে সেই চুক্তি অনুমোদন দিয়েছে। তাই আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, অভিনন্দ জানাই। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, সকল দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে সকলে একমত হয়ে তারা এই স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন দিয়েছে, তাদের সংবিধান সংশোধন করেছে। ভারত বাংলাদেশের বন্ধু, তার দৃষ্টান্ত আমরা ১৯৭১ সালে পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের যে বৈদেশিক নীতি-আদর্শ শিখিয়েছেন, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়, সেই বৈদেশিক নীতিমালা নিয়েই কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তাদের সাথে যোগাযো ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা, তাদের সাথে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অংশীদারিত্ব সৃষ্টি করে দারিদ্র থেকে দেশকে মুক্ত করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য। আমরা যখনই প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে মিলিত হই আমি একটি কথাই বলি, আমাদের একটি মাত্র শত্রু, সেটা হলো দারিদ্র। এই দারিদ্রের সাথে লড়াই করে আমাদের দেশকে উন্নত করতে হবে। আর সেটা আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পারবো। কোনো দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে যে কোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব। গঙ্গা পানির চুক্তি আমরা করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি করেছি, আবার ৬৪ হাজার বাংলাদেশের জনগণ ভারতে শরণার্থী ছিল, আমরা তাদের ফিরিয়ে এনেছি, পুনর্বাসন করেছি। এবার স্থল সীমানা চুক্তি হয়েছে। আমাদের কোনো তৃতীয় পক্ষ লাগেনি। প্রতিটি সমস্যা আমরা দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে করতে পেরেছি। এটা আমাদের রাজনৈতিক সাফল্য, এটা আমাদের কূটনৈতিক সাফল্য। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অনেকে বলেছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হলে কী হবে? বাংলাদেশ বটমলেস বাস্কেট হবে। আজ আমি তাদের বলতে চাই, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নে ভরপুর। বরং সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ এখন একটা দৃষ্টান্ত।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজের জীবনের কোনো চাওয়া-পাওয়া আমার নেই। ১৯৭৫ এর পর থেকে সবকিছুই ত্যাগ করেছি। একটাই লক্ষ্য, এই বাংলার মানুষকে একটা উন্নত জীবন উপহার দেওয়া। তাদের জীবনকে অর্থবহ করতে হবে। তাদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার আলোতে আলোকিত করতে হবে। তাদের সকলের কাছে স্বাস্থসেবা পৌঁছে দিতে হবে। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে হবে। তাদের জীবনকে মানসম্মত করতে হবে। আধুনিক বিশ্বের সাথে যাতে তাল মিলিয়ে চলতে পারে সেইভাবে আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তির শিক্ষা দিতে হবে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই শুধু বাংলাদেশী নয়, আমাদের প্রবাসী বাঙালী যারা রয়েছেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে যেমন তাদের অবদান রয়েছে, তেমনি আমাদের অর্থনীতিতেও তাদের বিরাট অবদান রয়েছে। তাই তাদের প্রাতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘শুধু স্থল সীমান্ত চুক্তি নয়, আমাদের লক্ষ্য আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে আরও উন্নত করে গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশ গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। তাই ২০০৮ এর নির্বাচনে আমরা যে ইশতেহার ঘোষণা করেছিলাম, সেখানে উল্লেখ করেছিলাম রূপকল্প-২০২১। ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। সেই সুবর্ণজয়ন্তী আমরা ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্রমুক্ত হয়ে পালন করতে চাই। ২০১৪ সালে আমরা ঘোষণা দিয়েছি, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এমিরেটস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, শিক্ষাবিদ অনুপম সেন, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান, সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান।

 

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।