নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে ছাত্র নামধারী এক ইয়াবা সিন্ডিকেট ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। দিন-দিন বেপরোয়া ভাবে মরণ ঘাতক ইয়াবার চালান পাচার করাতে শংকিত হয়ে পড়েছে সচেতন সুশীল সমাজ। শহরে পড়ালেখার অজুহাত দেখিয়ে ইয়াবা কারবার করে ওই ছাত্র নামধারী ইয়াবা ব্যবসায়ী সল্প সময়ে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান। আর এলাকায় বেপরোয়া জীবনযাপন করে এলাকার সুশীল জনসাধারণকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ইতিপূর্বে ওই ছাত্র নামধারী ইয়াবা কারবারী চট্টগ্রাম শহরে ইয়াবা সহ আটক হয়ে তথ্য গোপন করে নাম ঠিকানা ভুয়া দিয়ে জামিনে বেরিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ালেও ঠিকই ইয়াবার বড়-বড় চালান সীমান্তের ঘুমধুম থেকে অভিনব উপায়ে ঢাকা, চট্রগ্রাম, বরিশাল, গাইবান্ধা ও গোবিন্দগঞ্জে সরবরাহ করে যাচ্ছে। ওই ইয়াবা সিন্ডিকেটে ঘুমধুম, বেতবুনিয়া বাজার, জলপাইতলী, তুমব্র“, ছাড়াও মহেশখালী -কুতুবদিয়া ও চট্টগ্রামের অন্তত ১০ /১২ জন ইয়াবা কারবারি রয়েছে। আর ওই ইয়াবা সিন্ডিকেটের প্রধান নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের খিজারী ঘোনার সৌদি আরব প্রবাসী ছৈয়দ আলমের ২য় পুত্র জসিম উদ্দিন। তার বাড়ি সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় ইয়াবা সহ মাদকের বড় বড় চালান সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে নির্বিঘেœ গন্তব্য স্থলে সরবরাহ করে যাচ্ছে। মিয়ানমারে রয়েছে তার নিজস্ব সোর্স। ঐসব সোর্সের মাধ্যমে দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিয়ানমারে পাচার করে থাকে। ঐ ব্যবসায়ী জসিম বিগত ১৭/০১/২০১৫ইং তারিখ চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও থানাধীন ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ একাডেমী ভবন ২য় এর বিপরীতে বনফুল মিষ্টির দোকানের সামনে থেকে চান্দগাঁও থানা পুলিশের হাতে আটক হয়। এ সময় বিপুল ইয়াবার চালান আটক হলেও তার সহযোগী সহ মাত্র ২শ ইয়াবা দিয়ে মামলা রুজু করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু জসিম উদ্দিন পিতা- ছৈয়দ আলম সাং- খিজারী ঘোনা ১ নং ওয়ার্ড ঘুমধুম ইউপি, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান প্রকৃত নাম ঠিকানা হলেও ভূঁয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে জামিনে বেরিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। চান্দগাও থানায় আটক হওয়া মামলার বাদী উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ আইয়ুব উদ্দিন বিপি নং- ৮৫১৩১৫৩১৪৮, তাকে জসিম উদ্দিনের নাম দেন সাইফুল ইসলাম (২২), পিতা- রফিকুল ইসলাম, মাতা- জোসনা আক্তার সাং- হাজির পাড়া (সিদ্দিকের বাড়ী) থানা- উখিয়া, জেলা- কক্সবাজার। ঐ সময় জসিমের হাল সাং দেখানো হয় চাইল্লাতলী, হাজি পাড়া, থানা- বায়েজিদ বোস্তামী, জেলা- চট্টগ্রাম। তার সাথে আটক হওয়ায় অপর যুবক ইয়াবা ব্যবসার সহযোগী বান্দরবানের হলুদিয়ার হলেও সেও ভূঁয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে। তাতে তার নাম দেওয়া মোঃ ওসমান গণি (২০), পিতা- জহির আহমদ, মাতা- মাবিয়া খাতুন, সাং- ভাটিয়ারী (জাফর চেয়ারম্যানের বাড়ি) থানা- সীতাকুন্ড , জেলা- চট্টগ্রাম। চান্দগাঁও থানার মামলা নং- ১৮/১৫ তারিখ- ১৭/০১/২০১৫ইং, ধারা- ১৯৯০ সনের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত/২০০৪) এর ১৯ (১) টেবিলের ৯ (খ)। জসিম উদ্দিন ভূঁয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে অনুমান ৩ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পায়। তার জামিনের নিযুক্ত আইনজীবি ছিলেন এডভোকেট মানিক দত্ত, জেলা ও মহানগর দায়রা জজ আদালত, চট্টগ্রাম, রুম নং- ৫১৭, আইনজীবি এনেক্স ভবন। আদালতের জিম্মাদের জনৈক মোহাম্মদ জসিম, পিতা- রফিকুল সাং- চাইল্লাতলী, হাজি পাড়া, থানা- বায়েজিদ বোস্তামী, জেলা- চট্টগ্রাম। বর্তমানে মামলাটি ৩য় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত চট্টগ্রামে বিচারাধীন রয়েছে। ষ্পেশাল ট্রাইবুন্যালের মামলা নং- এসটি ৩০১১/২০১৫। তৎকালীন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এসএম শহিদুল ইসলাম, চান্দগাঁও থানা, সিএমপি চট্টগ্রাম। ভূয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ঘুমধুমের জসিম উদ্দিন কারাগার থেকে বেরিয়ে বর্তমানেও হরদম ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে ইয়াবা জসিমের আপন সহোদর ছোট ভাই সাইফুদ্দিন তার ব্যবসায়ীক অংশীদার। সাইফুদ্দিনের একটি মাহিন্দ্রা গাড়ি ইয়াবা সহ বিগত ২/৩ বছর আগে মরিচ্যা বিজিবি চেক পোষ্টে ৮ হাজার পিস ইয়াবা সহ আটক হয়। ঐসময় সাইফুদ্দিন পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও তার গাড়ির ড্রাইভার নুরুল আলম পল্লী নামক ব্যক্তি আটক হয়। জসিম সাইফুদ্দিনের ইয়াবা ব্যবসা নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর জের ধরে সংবাদদাতা স্থানীয় এক সংবাদকর্মীকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ স্টাট্যাস পোষ্ট করে। এ নিয়ে ঐ সাংবাদিক জসিম উদ্দিন, সাইফুদ্দিন সহ ৫ জন এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাত নামা আরো ৫/৬ জনের নামে উখিয়া থানায় সাধারণ ডায়ের লিপিবদ্ধ করেন। যার নং- ৭৭৬ তারিখ- ১৯/১২/২০১৬ইং। বর্তমানে জসিমের নেতৃত্বে ইয়াবা সিন্ডিকেট বিভিন্ন সময় স্থানান্তর হয়ে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করিয়া আসছে। কখনো কবি, কখনো লেখক, কখনো ছাত্র, কখনো ছাত্র নেতা বিভিন্ন ছন্দ নাম পদবী ও ঠিকানা ব্যবহার করে ঢাকা চট্টগ্রামে বড় বড় ইয়াবার চালান পাচার করছে। তৎকালীন চান্দগাঁও থানায় ইয়াবা সহ আটক হওয়ার সময় জসিম উদ্দিন উখিয়ার যে নাম ঠিকানা ব্যবহার করেছিল তার অস্থিত্ব নাই উখিয়াতে। অল্প ক’দিনেই চট্টগ্রামে দোকান পাট, ঘুমধুমে জায়গা জমি দোকান পাট, ব্যাংক ব্যালেন্স, নগদ টাকা বিনিয়োগ সহ অন্তত কোটি টাকার সম্পদ ও বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছে। তারা ইয়াবা লেনদেন করেছেন ইসলামী ব্যাংক কোটবাজার শাখার এটিএম বুথে প্রতি মাসে অন্তত ১৫ লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করা হত। তারা ২ সহোদর ছাত্র হিসেবে কিভাবে কোটি টাকার মালিক হল? আর বৈধ ব্যবসা থাকলে সরকারকে কয় টাকা রাজস্ব ও আয়কর দিয়েছেন তা নিয়ে এলাকাবাসীকে ভাবিয়ে তোলেছে। ঘুমধুম তদন্ত পুলিশের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মোঃ এরশাদ উল্লাহ জানান, আমি ট্রেনিংয়ে রয়েছি। ইয়াবা ব্যবসায়ী যত বড় শক্তিশালী হউক না কেন তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হইবে। চান্দগাও থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ঐ নামের আসামী পুলিশের খাতায় দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছে। এ বিষয়ে সোর্স নিয়োগ করে তাকে আটকের বিষয়ে উখিয়া থানাকে অবহিত করা হবে। সচেতন মহলের দাবী তার ইয়াবা ব্যাবসাসা ও অর্জিত সম্পদের তথ্য খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা, দুৃর্ণীতি দমন কমিশন সহ আইনশৃংখলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ঘুমধুমের সুশীল সমাজ।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।