১৪ অক্টোবর, ২০২৫ | ২৯ আশ্বিন, ১৪৩২ | ২১ রবিউস সানি, ১৪৪৭


শিরোনাম
  ●  রামুতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা রিজনের নেতৃত্বে এক ব্যক্তির দোকান দখলের অভিযোগ, চাঁদাবাজি মামলায় জিটু কারাগারে   ●  গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে হুমকি অভিযোগ ৪ এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে   ●  কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্কিলস অ্যান্ড ইনোভেশন কম্পিটিশন অনুষ্ঠিত   ●  আলোচিত ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে লুটপাট, পরে রফাদফা!   ●  দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ   ●  কক্সবাজারে ভূমি নিবন্ধনে আকাশচুম্বী বর্ধিত উৎসেকর বাতিল, প্রসংশায় পঞ্চমুখ সালাহউদ্দিন আহমদ   ●  হলদিয়ায় ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে উধাও ৩ যুবক   ●  দুর্ধর্ষ প্রতারক দিদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি   ●  ইয়াবাসহ পুলিশে সোপর্দ, চোর সন্দেহে চালান, এলাকায় ক্ষোভ   ●  শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল

‘অভিযানে ক্ষুব্ধ, ফরেস্টার সাজ্জাদকে পূর্বপরিকল্পনায় হত্যা করা হয়’

বিশেষ প্রতিবেদক:

উখিয়ার দোছড়ি বনবিটে যোগদানের পর ফরেস্টার সাজ্জাদুজ্জামান সজল দফায় দফায় অভিযান চালান মাটি পাচারে নিয়োজিত ডাম্পারট্রাকের বিরুদ্ধে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে পাহাড়খেকো চক্র ও ডাম্পার সিন্ডিকেট। অভিযানে ক্ষুব্ধ থেকে ফরেস্টার সাজ্জাদকে পূর্বপরিকল্পনায় হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) মো. রাসেল। মঙ্গলবার সকালে উখিয়া থানার হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এইসব তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, পূর্ব পরিকল্পিত ছঁক অনুযায়ী গত ৩১ মার্চ রাতে ডাম্পার চালক বাপ্পি তাকে পিষিয়ে হত্যা করে। ওই সময় কামাল নামের আরেক চালক তার সহযোগী হিসাবে ছিলেন। ফরেস্টার সাজ্জাদুজ্জামান মৃত্যুর এক সপ্তাহে আগে কামাল ড্রাইভারের একটি ডাম্পারও আটক করেছিল। এতে কামাল ড্রাইভারসহ পাহাড় চক্রটি চরম ক্ষুদ্ধ ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল বলেন, ডাম্পট্রাক চাপা দিয়ে ফরেস্টার সাজ্জাদুজ্জামান সজলকে পিষিয়ে হত্যার পর ঘাতক বাপ্পি কৌশলে আত্নগোপনে চলে যায়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত সোমবার চট্রগ্রামের বন্দর থানা এলাকা থেকে উখিয়া থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। মামলার অন্য আসামীদের ধরতে পুলিশী অভিযান চলমান রয়েছে বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা ও উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী মো. শফিউল আলম ‘বাংলাদেশ পুলিশের এই অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, বনকর্মীদের শোকের মাঝে পুলিশ একটি সুসংবাদ দিয়েছে। বনকর্মীরা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাঁরা অন্যদেরও গ্রেফতারের পাশাপাশি শাস্তির দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.শামীম হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নাছির উদ্দিন মজুমদার, উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাউসার হামিদ, পরিদর্শক (এসআই) হোসেন মোবারক।
গত রবিবার (৩১ মার্চ) ভোরে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি পাচার করছিল একদল বনদস্যু। খবর পেয়ে বন বিভাগের দোছড়ি বিটের কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামানসহ কয়েকজন বনকর্মী ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তিনিসহ মোটরসাইকেল আরোহী দুজনকে পাচারকারীদের মাটিভর্তি ডাম্প ট্রাক চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে সাজ্জাদুজ্জামান মারা যান।মোহাম্মদ আলী নামের অপর এক বনরক্ষী আহত হন।
৩০ বছর বয়সি নিহত মো. সাজ্জাদুজ্জামান কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বনবিটের বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলার গজরিয়া উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে। ঘটনায় ২৭ বছর বয়সি আহত বনরক্ষী মোহাম্মদ আলী টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ঝিমংখালী এলাকার আবুল মজ্ঞুরের ছেলে।
এঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এ ঘটনায় এর আগে এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। সোমবার (১ এপ্রিল) বনবিভাগের উখিয়ার রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী মো. শফিউল আলম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
আসামিরা হলেন, উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম হরিণমারা এলাকার মোহাম্মদ কাশেমের ছেলে ও ডাম্পট্রাকটির চালক মো. বাপ্পী (২৩), একই এলাকার সুলতান আহম্মদের ছেলে ছৈয়দ আলম ওরফে কানা ছৈয়দ (৪০) ও তার ছেলে মো. তারেক (২০), রাজাপালং ইউনিয়নের তুতুরবিল এলাকার নুরুল আলম মাইজ্জার ছেলে হেলাল উদ্দিন (২৭), হরিণমারা এলাকার মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে ছৈয়দ করিম (৩৫), একই এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে আনোয়ার ইসলাম (৩৫), আব্দুর রহিমের ছেলে শাহ আলম (৩৫), হিজলিয়া এলাকার ঠান্ডা মিয়ার ছেলে মো. বাবুল (৫০), একই এলাকার ফরিদ আলম ওরফে ফরিদ ড্রাইভারের ছেলে মো. রুবেল (২৪) এবং হরিণমারা এলাকার শাহ আলমের ছেলে কামাল উদ্দিন ড্রাইভার (৩৯)।

মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি ছৈয়দ করিম (৩৫)।

গত রোববার বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী নিহত বিট কর্মকর্তার পরিবারের কাছে ১৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেন। এসময় মন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে দুষ্কৃতকারীদের মিনি ট্রাকচাপায় নিহত বন বিভাগের কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামানের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।

প্রসঙ্গতঃ ২০২০ সালে ফরেস্টার হিসেবে বন বিভাগে যোগ দেন সাজ্জাদুজ্জামান সজল। দোছড়ি বনবিটে গত বছরের শেষ দিকে যোগ দেওয়ার পর থেকেই পাহাড় অধ্যুষিত উখিয়ায় পাহাড় ও বন রক্ষায় প্রায় প্রতিরাতেই অভিযান পরিচালনা করে আসছিলেন তিনি। গত তিন মাসে দুই ডজনের মতো ডাম্পট্রাক জব্দ করে মামলার আওতায় এনে রেঞ্জ অফিসে রেখেছেন তিনি। একরাতে চারটি মাটিভর্তি ডাম্পট্রাক জব্দের ঘটনাও আছে তার। এসব কারণে তার ওপর চরম ক্ষুব্ধ ছিল পাহাড়খেকো চক্র। যার ফলশ্রুতিতে তাকে গাড়িচাপায় হত্যার শিকার হতে হয়েছে বলে মনে করছেন তার সহকর্মীরা।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।