৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  আরসা প্রধান আতাউল্লাহসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা   ●  কক্সবাজারে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্রসহ ৮ ডাকাত আটক   ●  হলফনামা বিশ্লেষণ: ৫ বছরে এমপি আশেকের সম্পদ বেড়েছে ২ কোটি টাকার কাছা-কাছি   ●  ২১ দিন বন্ধের পর মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে এল পন্যবাহি চারটি ট্রলার   ●  মহেশখালীতে সাবেক ইউপি সদস্যেকে পিটিয়ে হত্যা   ●  ভ্রাতৃঘাতি দেশপ্রেমহীন রোহিঙ্গা আরসা-আরএসও প্রসঙ্গে; এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর   ●  কক্সবাজারে রেল : শুরুতেই ইজিবাইক চালকদের দৌরাত্ম্য ২০ টাকা ভাড়া রাতা-রাতি ৫০ টাকা!   ●  মাদক কারবারিদের হুমকির আতঙ্কে ইউপি সদস্য কামালের সংবাদ সম্মেলন   ●  সালাহউদ্দিন সিআইপি ও এমপি জাফরকে আদালতে তলব   ●  কক্সবাজার-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন এমপি জাফর আলম

সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে আবারো অর্ধশত সুপারিশমালা উপস্থাপন

বিশেষ প্রতিবেদক:
সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে অর্ধশত সম্ভাব্য সুপারিশ তৈরি করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের শতাধিক সমস্যা নির্ধারণ করেছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। এসব সমস্যা উত্তরণে সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে ঐ অর্ধশতাধিক সম্ভাব্য খসড়া সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়েছে।
রোববার (৩০ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের শহিদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে ‘সেন্টমার্টিনের পরিবেশ. প্রতিবেশ এবং জীব বৈচিত্র্য সুরক্ষা ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের নিমিত্তে অংশীজনের সাথে মতবিনিময়’ সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রস্তাবণায় রয়েছে, স্থানীয়দের ইকোলজিক্যালি বাসস্থান তৈরী, বাসিন্দাদের পেশাগত আইডি প্রদান, সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক ভিত্তিতে  প্রতিবেদন প্রেরণ, নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা, দ্বীপের জমি ব্যবহারের নীতিমালা প্রণয়ন, সকল হোটেল-মোটেল ধারন ক্ষমতা নির্ধারণ করা, প্রতিদিন কি পরিমাণ পর্যটক যাচ্ছে বা যেতে পারবে তা যাচাই বাছাই করণ, সরকারি স্থাপনা বা রেস্টহাউজ সমূহ শুধুমাত্র দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার, কোন ধরণের বর্জ্য সাগরে ফেলা যাবে না, বর্জ্য ব্যবস্থাপণায় একশ মিটার অন্তর ডাস্টবিন স্থাপন ও সেকেন্ডারি ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন,  জাহাজের যে কোন বর্জ্য মূল ভূখন্ডের প্রেরণ নিশ্চিত করণ, জাহাজ চলাচলে পারমিট দিতে সমন্বয় থাকতে হবে। জীববৈচিত্র রক্ষায় দ্বীপে নিস্তব্ধতা ও শান্তি বজায় রাখতে হবে। যে কোন প্রকার আলো, ফানুস, আতশবাজি এবং উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। সেন্টমার্টিন বিচে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করতে হবে। পাখি, মাছ, কচ্ছপ, কাঁকড়া ও প্রবাল রক্ষায় দ্বীপে স্পিডবোট চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। শব্দ দূষণ রোধের যন্ত্র চালিত মোটরসাইকেল, ভটভটি এবং ব্যাটারি চালিত যানবাহন নিষিদ্ধ করে ম্যানুয়াল যানবাহন যেমন রিক্সা-ভ্যান ব্যবহার নিশ্চিত করবে। প্রয়োজনের নিরিখে একটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে হতে পারে। তবে, সব স্থাপনাকে ইকোটাইপের করতে উৎসাহিত করতে হবে। যারা সেন্টমার্টিন দ্বীপটি পুরো ঘুরে দেখবে এক হাজার ফি এবং রাতে অবস্থান করলে এন্ট্রি ফি হিসেবে সরকারি কোষাগারে ২ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। সেই টাকা জাহাজ টিকেট কিংবা হোটেল কক্ষ ভাড়ার সাথে নিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়াও দ্বীপ বাঁচাতে পরিবেশ অধিদপ্তর উপকূলীয় বন বিভাগের পরামর্শের সেন্টমার্টিন দ্বীপের চার পাশে কমপক্ষে ১০ হাজার ম্যানগ্রোভ, কেয়াবন সৃষ্টি করবেন। পর্যটন ও দ্বীপবাসীর জন্য একটি মাত্র জেটি তৈরী করতে হবে। জেটি নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তর ৭ দিনের মধ্যে ছাড়পত্র দিবে। দ্বীপে বিশেষ সংরক্ষিত অঞ্চল করতে হবে। সকল হোটেল-মোটেল দোকান মালিক কর্তৃপক্ষ নিজস্ব সুয়ারেজ সিস্টেম স্থাপন করতে হবে।
এদিকে, পর্যটককে সেন্টমার্টিনের শত্রæ দাবি করে কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে হলে সেখানে পর্যটক যাওয়া নিরুৎসাহিত করতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। স্থানীয় অধিবাসীদের প্রতিটি ঘরকেই ইকোট্যুরিজমে পরিণত করে সেখানেই পর্যটকদের থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করা যায়।
সভায় প্রেজেন্টেশন প্রদর্শন করেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১শ ৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১শ ৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১শ ৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২শ ৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, চার প্রজাতির উভচর ও ১শ ২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া গেলেও এখন অনেকগুলো ধীরে ধীরে কমছে। তিন ধরণের কাছিমের প্রজনন স্থান সেন্টমার্টিন। কিন্তু পরিবেশ দূষণের কারণে কাছিমগুলো ডিম পাড়তে আসছে না।
জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম বলেন, এত সিদ্ধান্ত নিয়ে লাভ নেই। আপাতত সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাওয়া বন্ধ করা দরকার। যারা সেন্টমার্টিন নিয়ে বাণিজ্য করে, কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করে তারা সেন্টমার্টিন বাচাঁতে এগিয়ে আসে না।
জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে সভায় সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, জাফর আলম, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, কউক সচিব আবু জাফর রাশেদসহ বিভিন্ন বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তাগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।

 

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।