৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ২২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ | ২২ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  আরসা প্রধান আতাউল্লাহসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা   ●  কক্সবাজারে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্রসহ ৮ ডাকাত আটক   ●  হলফনামা বিশ্লেষণ: ৫ বছরে এমপি আশেকের সম্পদ বেড়েছে ২ কোটি টাকার কাছা-কাছি   ●  ২১ দিন বন্ধের পর মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে এল পন্যবাহি চারটি ট্রলার   ●  মহেশখালীতে সাবেক ইউপি সদস্যেকে পিটিয়ে হত্যা   ●  ভ্রাতৃঘাতি দেশপ্রেমহীন রোহিঙ্গা আরসা-আরএসও প্রসঙ্গে; এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর   ●  কক্সবাজারে রেল : শুরুতেই ইজিবাইক চালকদের দৌরাত্ম্য ২০ টাকা ভাড়া রাতা-রাতি ৫০ টাকা!   ●  মাদক কারবারিদের হুমকির আতঙ্কে ইউপি সদস্য কামালের সংবাদ সম্মেলন   ●  সালাহউদ্দিন সিআইপি ও এমপি জাফরকে আদালতে তলব   ●  কক্সবাজার-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন এমপি জাফর আলম

সালাহ উদ্দিন নিখোঁজ রহস্যে ঘেরা!

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ নিখোঁজ রহস্য আরো ঘনীভূত হচ্ছে। হাইকোর্টে জমা দেওয়া উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে যেসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তাতে রহস্যের জট তো খোলেইনি, বরং রহস্য আরো দানা বেঁধেছে।

পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন উত্তরার যে বাসা থেকে সালাহ উদ্দিন আহমদকে তুলে নিয়ে যাওয়ার দাবি করা হচ্ছে, সেই বাসা থেকে চার-পাঁচজন মেহমানের সঙ্গে তিনি স্বেচ্ছায় বেরিয়ে গেছেন। কিন্তু সালাহ উদ্দিন আহমদের স্ত্রী হাসিনা আহমদ দাবি করে আসছেন, ‘১০ মার্চ রাত ১০টার দিকে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১৩-বি রোডের ৪৯/বি নম্বর ভবনের দোতলা বাসা থেকে তার স্বামীকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।’

উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি রফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে জানান, আলোচিত ওই ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ডিএমডি হাবিব হাসনাত ঘটনার চার দিন আগেই সস্ত্রীক বাসা ছেড়ে চলে যান। যাওয়ার সময় রায়হান নামের একজন মেহমান রেখে যান। হাসনাত যাওয়ার সময় বলে যান তাদের অনুপস্থিতিতে ওই মেহমান বাসায় থাকবেন।

ওসি আরো জানান, ১০ মার্চ আনুমানিক রাত ৯টার দিকে গাড়ি নিয়ে চার-পাঁচজন মেহমান দ্বিতীয় তলার পশ্চিম পাশের হাসনাত সাহেবের বাসায় আসেন। আনুমানিক আধা ঘণ্টা পর ওই মেহমানদের সঙ্গে আগের পুরুষ লোকটি (কথিত রায়হান) নিচে নেমে গাড়িযোগে চলে যান। তবে ওই লোকটি সালাহ উদ্দিন আহমদ কি না, তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তারা সন্দেহ করছেন, ওই রায়হানই সালাহ উদ্দিন হতে পারেন। এ কারণে পুলিশ এখন সেই মেহমানদের খোঁজ করছে।

এদিকে সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমদ জানান, তিনি দুবাই থেকে একটি ফোন পেয়ে জানতে পারেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তার স্বামীকে ওই ফ্ল্যাট থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু তার স্বামী ২৪ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকা সত্ত্বেও কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাননি- এমন প্রশ্নেরও সদুত্তর হাসিনা দিতে পারেননি বলে জানান ওসি।

ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, তুলে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যক্ষ সাক্ষী না থাকায় সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য সালাহ উদ্দিনের স্ত্রীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি কোনো লিখিত অভিযোগ ছাড়াই থানা এলাকা ত্যাগ করেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে সেদিনই একটি ডায়েরি নথিভুক্ত করেন ওসি রফিকুল ইসলাম। পরে ওসি নিজেই এসব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তদন্ত করেন।

আদালতে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে ওসি বলেছেন, ‘ঘটনার সত্যতা নিরূপণের জন্য হাবিব হাসনাত ও তার স্ত্রী সুমনার সন্ধান করে জানতে পারি যে, হাবিব হাসনাত তার ব্যাংক থেকে ছুটি নিয়েছেন। সুমনা তার বাবার বাড়িতেও নেই। উল্লেখ্য, এই দম্পতির উভয়েরই দ্বিতীয় বিয়ে। উভয়ের প্রথমপক্ষের সন্তান থাকলেও তারা তাদের সঙ্গে থাকেন না। তাদের মোবাইল দুটি বন্ধ পাওয়া যায়। এমতাবস্থায় কোনোভাবেই নিশ্চিত হওয়া যায় না যে, সালাহ উদ্দিন আহমদ আলোচ্য বাসায় ছিলেন বা তাকে গ্রেফতার বা অপহরণ করা হয়েছে।’

পাশাপাশি ওসি জিডিতে উল্লেখ করেছেন, সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমদ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার ২০-২৫ জন সাংবাদিকসহ থানায় হাজির হয়ে মৌখিক অভিযোগ করেন যে, ১০ মার্চ রাত আনুমানিক ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১৩-বি রোডের, ৪৯বি বাড়ির তৃতীয় তলা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর মোবাইল ফোনে অজ্ঞাতনামা কারও সঙ্গে আলাপ করে জানান, তৃতীয় নয় দ্বিতীয় তলা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তবে তিনি জিডি করার জন্য লিখিত কোনো আবেদন বা অভিযোগ নিয়ে আসেনি। বা তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যেতে দেখেছে বা তিনি নিজে উল্লেখিত বাসায় ছিলেন কি না- এমন প্রশ্নে হাসিনা আহমদ জানান, তিনি নিজে ওই বাসায় বসবাস করেন না এবং ঘটনার সময় তিনি নিজে ওই বাসায় উপস্থিত ছিলেন না।

অন্যদিকে, সালাহ উদ্দিন আহমদকে খুঁজে বের করতে ও আদালতে হাজির করার প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানিকালে রোববার সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জিডি ও তদন্ত প্রতিবেদনটি আদালতে তুলে ধরেন। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ছাড়াও র‌্যাব, সিআইডি, এসবি ও ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে পাঠানো পৃথক পৃথক প্রতিবেদনও আদালতে তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

এসব প্রতিবেদনে সালাহ উদ্দিন আহমেদ তাদের হেফাজতে নেই বা তার সম্পর্কে অবহিত নয় বলে জানানো হয়। তবে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও প্রতিবেদনগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে। র‌্যাবের প্রতিবেদনে শুধু এক লাইনে বলা হয়, ‘সালাহ উদ্দিন আহমদকে পুলিশ হেফাজতে গ্রহণ করা হয়নি’। এ ছাড়া ডিবির পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। কোনো এফিডেভিট ছাড়াই প্রতিবেদনগুলো আদালতে জমা দেওয়া হয়। এর তীব্র বিরোধিতা করেন সালাহ উদ্দিন আহমদের স্ত্রীর আইনজীবীরা।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।