
প্রাণপণ লড়াই করেও পারল না বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের কাছে ৩ উইকেটে হেরেছে তারা।
মাহমুদুল্লাহর ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিং আর সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমানের দারুণ ব্যাটিংয়ে ৭ উইকেটে ২৮৮ রান করে বাংলাদেশ। এবারের আসরে এই প্রথম কোনো দলকে অলআউট করতে ব্যর্থ হল অন্যতম ফেভারিট নিউ জিল্যান্ড।
বড় লক্ষ্য দিয়ে দারুণ বল করেন সাকিব আল হাসান। তবে মার্টিন গাপটিলের শতক আর রস টেইলরের অর্ধশতকে ৭ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় নিউ জিল্যান্ড।
এই হারের পর ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের চতুর্থ স্থানে থাকা প্রায় নিশ্চিত। আর তা হলে আগামী বৃহস্পতিবার মেলবোর্নে ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার-ফাইনাল খেলবে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
বোলিংয়ে শুরুতেই সাফল্য পায় বাংলাদেশ। স্পিনে ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে ফেরানোর পরিকল্পনার কথা আগেই জানিয়েছিল তারা। সে পরিকল্পনা সফলও হয়।
দুই প্রান্তেই স্পিন দিয়ে বোলিং শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারটি মেডেন নেন সাকিব। তার পরের ওভারে গাপটিল ১৬ রান নিলেও দমেননি এই বাঁহাতি স্পিনার।
অন্য বোলার না এনে পঞ্চম ওভারটি করতে আসেন সাকিব। সেই ওভারেই ম্যাককালামকে ফেরান তিনি। এগিয়ে এসে মেরে লংঅফে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দেন নিউ জিল্যান্ডের অধিনায়ক।

সেই ওভারেই কেন উইলিয়ামসনকে কাভারে তামিম ইকবালের ক্যাচে পরিণত করেন সাকিব। ২৪ ইনিংস পর এক অঙ্কের রানে আউট হলেন উইলিয়ামসন।তৃতীয় উইকেটে টেইলরকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন গাপটিল। তাদের ১৩০ রানের জুটি ভাঙার কৃতিত্ব সাকিবেরই। শতকে পৌঁছানো গাপটিলকে রুবেল হোসেনের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি।
১০০ বলে খেলা ম্যাচ সেরা গাপটিলের ১০৫ রানের ইনিংসটি গড়া ১১টি চার ও ২টি ছক্বায়।


এসেই দ্রুত রান তুলতে থাকেন গ্র্যান্ট এলিয়ট। ৩৪ বলে ৩৯ রানের কার্যকর ইনিংস খেলা এই ব্যাটসম্যান রুবেলের শিকারে পরিণত হন।


এলিয়টকে ফেরানোর পর নিয়মিত বিরতিতে আঘাত হেনে আশা বাঁচিয়ে রাখে বাংলাদেশ। অর্ধশতকে পৌছানো রস টেইলর ও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা কোরি অ্যান্ডারসনকে ফেরান নাসির হোসেন।লুক রনকিকে আউট করে নিজের চতুর্থ উইকেট নেন সাকিব। ২৬৯ রানে প্রথম সাত ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে নিউ জিল্যান্ড। তবে ড্যানিয়েল ভেটোরি ও টিম সাউদির ব্যাটে শেষ পর্যন্ত সাত বল বাকি থাকতেই জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা।
এর আগে শুক্রবার হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ট্রেন্ট বোল্টের দারুণ বোলিংয়ে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। তার সুইং ঠিক ভাবে সামলাতে না পেরে শুরুতেই ফিরে যান দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস ও তামিম ইকবাল।
ষষ্ঠ ওভারে বোল্ড হয়ে যান ইমরুল। দশম ওভারে স্লিপে অ্যান্ডারসনের তালুবন্দি হন তামিম।
প্রথম ৭ ওভারে মাত্র ৮ রান তোলে বাংলাদেশ। তবে মাহমুদুল্লাহ ও সৌম্যর পাল্টা-আক্রমণে পরের ৭ ওভারে ৬২ রান যোগ করে তারা। বোল্টের করা ১৪তম ওভারে ১৭ রান নেন এই দুই ব্যাটসম্যান।
১৫তম ওভারে ভেটোরি স্পিন আক্রমণে আসার পর রানের গতিতে ভাটা পড়ে।

নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এবারের আসরে কোনো দলই শতরানের জুটি গড়তে পারেনি। শতরানের জুটির খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন সৌম্য-মাহমুদুল্লাহ। ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতকে পৌঁছে সৌম্যর বিদায়ে ভাঙে ৯০ রানের চমৎকার জুটি।৫৮ বলে সৌম্যর ৫১ রানের দৃঢ়তা ভরা ইনিংসটি সাজানো ৭টি চারে।
নেমেই রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগী ছিলেন সাকিব। নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার অনুপস্থিতিতে এই ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়া সাকিব ফিরেন অ্যান্ডারসনের অফস্টাম্পের অনেক বাইরের একটি বল তাড়া করতে গিয়ে।

রানের গতি বাড়াতে গিয়ে দ্রুত ফিরে যান বাংলাদেশের আরেক ব্যাটিং ভরসা মুশফিকুর রহিম। অ্যান্ডারসনের বল এগিয়ে এসে স্লিপের ওপর দিয়ে তুলে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অ্যান্ডারসনের স্লোয়ারটি তার ব্যাট ছুয়ে রনকির গ্লাভসে জমা পড়ে।সাকিব-মুশফিকের দ্রুত বিদায়ের কোনো প্রভাব বাংলাদেশ ইনিংসে পড়তে দেননি মাহমুদুল্লাহ-সাব্বির রহমান। মাত্র ৪৮ বলে ৭৮ রানের জুটি গড়েন এই দুই জনে।
গ্রান্ট এলিয়টের বলে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের দারুণ এক ক্যাচে পরিণত হয়ে শেষ হয় সাব্বিরের ২৩ বলে খেলা ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংসটি।
সেখান থেকে দলকে তিনশ’ রানের কাছাকাছি নিয়ে যান মাহমুদুল্লাহ-নাসির। শেষ পর্যন্ত ১২৮ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদুল্লাহ। তার ১২৩ বলের ইনিংসটি ১২টি চার ও ৩টি ছক্কা সমৃদ্ধ।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ম্যাচেই ক্যারিয়ারের প্রথম শতক পেয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ। বিশ্বকাপের ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে শতক করা এই ব্যাটসম্যান খেলেছিলেন ১০৩ রান দারুণ এক ইনিংস।এবারের আসরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো দলের সর্বোচ্চ সংগ্রহ গড়া বাংলাদেশ শেষ ১০ ওভারে তোলে ১০৪ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৮৮/৭ (তামিম ১৩, ইমরুল ২, সৌম্য ৫১, মাহমুদুল্লাহ ১২৮*, সাকিব ২৩, মুশফিক ১৫, সাব্বির ৪০, নাসির ১১, রুবেল ০*; এলিয়ট ২/২৭, অ্যান্ডারসন ২/৪৩, বোল্ট ২/৫৬, ভেটোরি ১/৪২)
নিউ জিল্যান্ড: ৪৮.৫ ওভারে ২৯০/৭ (গাপটিল ১০৫, ম্যাককালাম ৮, উইলিয়ামসন ১, টেইলর ৫৬, এলিয়ট ৩৯, অ্যান্ডারসন ৩৯, রনকি ৯, ভেটোরি ১৬*, সাউদি ১২*; সাকিব ৪/৫৫, নাসির ২/৩২, রুবেল ১/৪০)
ম্যাচ সেরা: মার্টিন গাপটিল।
সূত্র- বিডি নিউজ২৪.কম
২০২১ ফেব্রুয়ারি ০৮ ০৮:৩১:১১
২০২০ জুলাই ২৮ ০৬:০২:৪৫
২০২০ জুন ২৭ ১১:১৮:৫৪
২০২০ জুন ২২ ১২:৫৩:২৯
২০২০ মে ২৯ ০৫:৫৩:৩৫
২০২০ মে ০৯ ০১:০৫:২৩
২০২০ মে ০৭ ০৫:০৩:৩০
২০২০ মে ০৫ ১১:৫৩:৩৯
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।