ওমর ফারুক হিরু : বঙ্গোপসাগরে মৎস্য সহ প্রাণিজ সম্পদ সুরক্ষায় ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য বন্ধ রয়েছে মাছ শিকার। ইলিশের জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সফলতাকে অনুসরণ করে সরকারের গৃহিত এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সচেতন মহল। কিন্তু এই পদক্ষেপে অসন্তুষ্ট বেকার হয়ে যাওয়া কক্সবাজারের লক্ষাধিক জেলে ও মৎস্যজীবিরা। ক্ষতিগ্রস্থরা বলছেন রমজানের মাসে সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় অর্থনৈতিকভাবে খুবই ক্ষতিগ্রস্থ। এই মুহুত্বে কোন ধরণের সহযোগিতা না পাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের ঈদ আনন্দ।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিচালিত গবেষণামতে মে মাসের শেষের দিক থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে বিচরণরত মাছ সহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণির প্রজননকাল। একারণেই সাগরের মৎস্যসহ বিভিন্ন মূল্যবান প্রাণিজ সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি ভা-ার বৃদ্ধিতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। এই তালিকায় সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি চিংড়ি, কাঁকড়ার মতো ক্রাস্টেশান আহরণেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
শহরের ফিসারীঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরের পাশাপাশি নদীর মোহনাও জারি করা এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সাগরে মাছ ধরারত সকল ফিশিং ট্রলার কক্সবাজারের উপকূলে ফিরে এসেছে। মাছের পল্টনে কোন ধরণের মাছ ক্রয়-বিক্রয় না হলেও অনেক মাঝি-মাল্লাকে অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। রমজানের পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে সমুদ্রে মৎস্য আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞার ফলে বড় ধরণের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জনান এসব জেলে ও মৎস্যজীবীরা।
মোহাম্মদ লিয়াকত মিয়া নামে এক জেলে জানান, ‘মাছ শিকার বন্ধে সরকারের দেওয়া সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই কিন্তু বন্ধটা এমন সময় দেওয়া উচিত হয়নি। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় কোন ধরণের আয় রোজগার না থাকায় এই রমজানে খুবই কষ্ট পেতে হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সন্তানদের ঈদের জামা কিনে দিতে পারিনি’।
বোরহান উদ্দিন নামে আরেক মাঝি জানান, বন্ধে’র কারণে আমরা খুবই ক্ষতিগ্রস্থ। পুরো রমজান মাসে পরিবারকে ভাল মন্দ খেতে দিতে পারিনি। যে অবস্থা দেখতেছি হয়ত ঈদ আনন্দ থেকেও বঞ্চিত হব। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করার কথা থাকলেও তেমন কোন সহযোগিতা পাচ্ছিনা।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহম্মদ জানান, সাগরে মূল্যবান মৎস্য সম্পদ ভান্ডারের সুরক্ষায় সরকারের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ফলপ্রসু। তবে জেলায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ মৎস্য সেক্টরে জড়িত রয়েছে। দুই মাসের অধিক সময় ধরে বেকার হয়ে পড়া জেলেদের জন্য রেশনিং সহ সহায়তা প্রয়োজন। নয়ত তারা ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা খালেকুজ্জামান বলেন, আগে সমুদ্রে বিভিন্ন প্রকার বড়বড় মাছ পাওয়া যেত। যা এখন পাওয়া যায়না। এসব মাছের প্রজনন সময় শুরু হয়েছে। তাই ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ জেলেদের সহযোগিতার ব্যাপারে তিনি বলেন, জেলায় ৪৮ হাজার ৩৯৩ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এছাড়াও অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে অনেক। বেকার হয়ে পড়া জেলেদের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা অথবা সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া ইতিমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
সাগরে মাছ আহরণ নিষেধাজ্ঞার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মাঝি-মাল্লারা যাতে সরকারী সহায়তা পান এবং পার্শবর্তী রাষ্ট্রের ট্রলার যাতে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মাছ শিকার করতে না পারে সে জন্য নজরদারী বাড়ানোর দাবী সকলের।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।