৫ অক্টোবর, ২০২৪ | ২০ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১ রবিউস সানি, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  কক্সবাজারে কিশলয়ে শিক্ষক গ্রুপিংয়ে শ্রেণী কার্যক্রমে স্থবির    ●  সাবেক সাংসদ জাফর ও সালাহ উদ্দিনসহ ৩৫জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ৪   ●  ইয়াবা সম্রাট বদির আরেক সহযোগী সি-লাইন বাদশা গ্রেপ্তার   ●  রামুতে বিএনপির নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর মামলায় সৈনিকলীগ নেতা গ্রেফতার   ●  আগামি দিনের রাজনীতি হবে খালেকুজ্জামানের দেখানো পথে   ●  কক্সবাজারে বৃক্ষমেলায় ৩৫ লক্ষ টাকার চারা বিক্রি     ●  কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র এডমিশন ফেয়ার উদ্বোধন   ●  কক্সবাজারে বিডিআর কল্যাণ পরিষদের স্মারক লিপি   ●  উখিয়ায় টমটম মালিক সমিতির নতুন কমিটি: সভাপতি আনোয়ার সিকদার, সাধারণ সম্পাদক টিপু   ●  আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কার পেল সায়মন বিচ রিসোর্ট ও সায়মন হেরিটেজ

রোহিঙ্গা সমাবেশে মদতদাতাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা

মানবজমিনঃ উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে মহাসমাবেশের নেপথ্যের মদতদাতাদের চিহ্নিত করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। এসব মদদদাতারা প্রায় সবাই ১৯৯০ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছে। সমাবেশের মূল নেতৃত্বদানকারি হিসেবে মুহিবউল্লাহকে চিহ্নিত করেছে কক্সবাজার জেলা ও উখিয়া উপজেলা প্রশাসন। এর বাইরে আরও বেশ কয়েকটি সংস্থা ও ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কক্সাবাজার জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই সমাবেশের চিহ্নিত মদতদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া করছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উখিয়া উপজেলা প্রশাসন গত ১লা সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৫শে আগস্ট রোহিঙ্গাদের সমাবেশের আগে ‘এডিআরএ’ নামের একটি এনজিও ১৯ ও ২১শে আগস্ট কক্সবাজার কলাতলীতে শালিক রেস্তোরাঁয় বৈঠক করে। বৈঠকে আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহকে আড়াই লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়। ‘আল মারকাজুল ইসলামী সংস্থা’ সমাবেশে টি-শার্ট তৈরিতে সহযোগিতা করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৫শে আগস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডি-৫ ব্লকের রোহিঙ্গা রিফিউজি কমিটির (আরআরসি) চেয়ারম্যান সিরাজুল মোস্তফা এবং সেক্রেটারি সাইফুল হকের নেতৃত্বে সামবেশটি পরিচালিত হলেও ‘ভয়েস অব রোহিঙ্গা’ ও ‘রোহিঙ্গা রিফিউজি কমিটি’ও সামাবেশে অংশ নেয়। আরআরসি’র সেক্রেটারি সাইফুল হকের নিকটাত্মীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করায় তাদের কাছ থেকেও চাঁদা সংগ্রহ করা হয়। বিশেষ করে লন্ডনে নুরুল ইসলাম তাদের প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস আগে সংগঠনের অফিস নির্মাণের জন্য ২ লাখ টাকা অনুদান দেন। এই সংগঠনের মূল কমিটি ২৫ জনের। তবে ক্যাম্প ৪-এ সবচেয়ে বড় সমাবেশ করতে সক্ষম হয় ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউমিনিটি রাইটস’ (এআরএসপিএইচ) নামে সংগঠনটি। এ সংগঠনের সভাপতি মুহিব উল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক উখিয়ার সিকদার বিল এলাকার বাসিন্দা ও উখিয়া কলেজের প্রভাষক নুরুল মাসুদ ভূঁইয়া সমাবেশের নেতৃত্ব দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, নুরুল মাসুদ ভূঁইয়ার পূর্বপুরুষ মিয়ানমারের বাসিন্দা ছিলেন। এছাড়া ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে রয়েছেন, মাস্টার আব্দুর রহিম। রয়েছে সংগঠনের ৭ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা। তাদের মাঝে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীসহ রয়েছে কক্সবাজার দায়রা জজ আদালতের দুই আইনজীবী এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. ফরিদুল আলম ও মাওলানা ইউসুফ। প্রতিবেদনে বলা হয়, সমাবেশকে সামনে রেখে কক্সবাজার গিয়ে সমাবেশে ব্যবহৃত টি-শার্ট তৈরি করা হয়। উখিয়া উপজেলার মসজিদ মার্কেটের নিশাত প্রিন্টার্স এবং কক্সবাজার পৌরসভার বাজারঘাটাস্থ শাহ মজিদিয়া প্রিন্টার্স থেকে টি-শার্ট ও ব্যানার ছাপানো হয়। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশকিছু সংগঠন কাজ করলেও মুহিব উল্লাহর নেতৃত্বে পরিচালিত ‘আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউমিনিটি রাইটস’ (এআরএসপিএইচ) সংগঠনটি বেশ শক্তিশালী বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। মুহিব উল্লাহ সর্ম্পকে প্রতিবেদনে বলা হয়, মুহিব উল্লাহর সংগঠনের ৩০০ সক্রিয় সদস্য রয়েছে। এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছে উখিয়া সিকদারপাড়া এলাকার আবদুল করিম ভূঁইয়ার ছেলে উখিয়া কলেজের প্রভাষক নুরুল মাসুদ ভূঁইয়া। ২৫শে আগস্ট তিনি উপজেলার মানবাধিকার সংগঠন ‘পিসওয়ে হিউম্যান রাইটস সোসাইটি’র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং সমাবেশে অংশ নেন। মাসুদের পূর্বপুরুষ মায়ানমারের নাগরিক বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। সংগঠনটির ৭ সদস্যের একটি উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে। তারা কক্সবাজারের স্থায়ী বাসিন্দা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মুহিব উল্লাহর সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলারের একটি মিটিং হয়। এরপর তিনি আমেকিার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান। গত ২৫শে আগস্ট অনুষ্ঠিত সমাবেশে যেসব ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা সংগঠনগুলো সহযোগিতা পায়নি, সেসব ক্যাম্পের মাঝিদের (নেতা) ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, গত ৩১ আগস্ট রাতে পালংখালী ইউনিয়নের জামতলী ১৫ নম্বর ক্যাম্পের হেড মাঝি ফারুক ও সহকারী মাঝি রহিমের ওপর হামলা চালিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে আর্মি চেকপোস্টের সামনে ফেলে রেখে চলে যায়। হেড মাঝি ফারুক মুহিব উল্লাহবিরোধী বলে তাদের ওপর এ হামলা চালানো হয়েছে। একই সঙ্গে অন্যান্য ক্যাম্পের মাঝিদের মধ্যে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে হামলার পরিকল্পনা বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে, নির্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে গত ২৫শে আগস্ট। এ উপলক্ষে ক্যাম্পে বিশাল সমাবেশ করে রোহিঙ্গারা। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া রোহিঙ্গাদের একাধিক সংগঠন কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পের এক্সটেনশন ব্লকে এই সমাবেশের আয়োজন করে। এতে রোহিঙ্গারা মায়ানমারে কোনভাবেই ফিরে যাবে না উল্লেখ করে ৫ দফা দাবিনামা জানানো হয়। পরে ওই সমাবেশ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে স্থানীয়রা। বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সরকার। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে কীভাবে রোহিঙ্গারা এত বড় সমাবেশ করল, এনিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা খোঁজখবর নিতে শুরু করে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ছাড়াও যেসব এনজিও সংস্থা ও সমাবেশে মদতদাতা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে কাজ শুরু করে। ওই সব সংস্থার রিপোর্ট সমন্বয় করে কক্সবাজারের ডিসি একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই এখন ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।