২১ অক্টোবর, ২০২৫ | ৫ কার্তিক, ১৪৩২ | ২৮ রবিউস সানি, ১৪৪৭


শিরোনাম
  ●  ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীন পরিবার, চার সন্তান স্কুলে যাওয়া বন্ধ   ●  রামুতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা রিজনের নেতৃত্বে এক ব্যক্তির দোকান দখলের অভিযোগ, চাঁদাবাজি মামলায় জিটু কারাগারে   ●  গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে হুমকি অভিযোগ ৪ এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে   ●  কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্কিলস অ্যান্ড ইনোভেশন কম্পিটিশন অনুষ্ঠিত   ●  আলোচিত ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে লুটপাট, পরে রফাদফা!   ●  দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ   ●  কক্সবাজারে ভূমি নিবন্ধনে আকাশচুম্বী বর্ধিত উৎসেকর বাতিল, প্রসংশায় পঞ্চমুখ সালাহউদ্দিন আহমদ   ●  হলদিয়ায় ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে উধাও ৩ যুবক   ●  দুর্ধর্ষ প্রতারক দিদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি   ●  ইয়াবাসহ পুলিশে সোপর্দ, চোর সন্দেহে চালান, এলাকায় ক্ষোভ

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় প্রভাবশালী চক্র

রহমত উল্লাহ:

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের বিরল জীববৈচিত্র ও প্রতিবেশ সুরক্ষায় সরকারের গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও বিরল জীববৈচিত্র পুনরুদ্ধারসহ দ্বীপটিকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর (সংশোধিত ২০১০) ক্ষমতাবলে দ্বীপে বেশ কিছু কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। নিষিদ্ধ কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত ছেড়াদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ, স্পীডবোট, ট্রলার বা অন্য কোন জলযানের যাতায়ত ও নোঙ্গর না করা, দ্বীপের চতুর্দিকে নৌ ভ্রমণ বন্ধ, সামুদ্রিক কাছিমের ডিম পাড়ার স্থানে চলাফেরাসহ রাতের বেলায় সৈকতে আতশবাজি, গান বাজনা, বারবি কিউ পার্টি বন্ধ এবং প্রবাল, শামুক, ঝিনুক, কেয়াফল ও বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী ক্রয় বিক্রয় বন্ধ। দ্বীপ রক্ষায় সরকারের এসব সিদ্ধান্ত শুরু থেকেই অমান্য করে আসছিল দ্বীপকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়, হোটেল -মোটেল ও বিভিন্ন নৌযান সার্ভিস পরিচালনাকারী প্রভাবশালী চক্রটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেন্টমার্টি দ্বীপের সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করে প্রভাবশালী চক্রটি সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে গতকাল রবিবার সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত দ্বীপে ধর্মঘট পালন করেছে। এসময় তারা দ্বীপে পর্যটকবাহী নৌযান ভিড়তে বাঁধা, সবধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ও দোকানপাট সহ সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখেন। পরে এক সভায় তারা ছেড়াদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল সহ পরিবেশ অধিদপ্তরের গৃহিত বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানান। এ প্রতিবাদ সমাবেশে সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন নুর আহমদসহ পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিয়েছেন। ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সমাবেশে অনেকেই ছেড়াদিয়া দ্বীপ যাতায়ত নিষিদ্ধের ঘোর বিরোধীতা করে বক্তব্য দেন।

এ ব্যাপারে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানান, ‘ছেঁড়াদ্বীপে পর্যটক নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে ধর্মঘট পালন করেছে দ্বীপবাসী। এখানে দ্বীপের বিভিন্ন পেশাজীবির মানুষ অংশ নিয়েছেন। তিন দিনের মধ্যে তাদের দাবি না মানলে আরো বড় কর্মসূচি ঘোষনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে প্রতিবাদ কেন জানতে চাইলে চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করছিনা, দ্বীপের মানুষের আয় রোজগারের কথা বিবেচনা করে সরকারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সেন্ট মার্টিন সার্ভিস বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ আলমের দাবি, ছেড়াদিয়া দ্বীপ ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি দ্বীপ। সেন্ট মার্টিনস আসা পর্যটকরা ছেড়াদিয়া দেখতে আগ্রহী হয়ে সেখানে যায়। তাদের যাতায়তের জন্য স্পীডবোট ও সার্ভিসবোট সার্ভিস চালু রয়েছে। কিন্তু সরকার পর্যটকদের সেখানে যাতায়ত নিষিদ্ধ করলে অনেকেই ব্যবসায়িকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হবে। তাই আমরা এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করছি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ থেকে বা টেকনাফ থেকে ছেড়াদিয়া দ্বীপে যাতায়তে কোন স্পীডবোট, ট্রলার, কান্ট্রিবোট বা যেকোন ধরনের নৌযানের অনুমতি নেই। যারা সেখানে পর্যটকদের বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন তারা সম্পূর্ণ বেআইনী কাজ করছেন। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক সেন্ট মার্টিনস কোস্ট গার্ডের এক কর্মকর্তা জানান, ছেড়াদিয়া দ্বীপে যাতায়ত বন্ধসহ, সেন্ট মার্টিনসের বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে একটি পক্ষ ঘোর বিরোধীতা করছে। আজকেও তারা সভা, সমাবেশ ও ধর্মঘট পালন করেছেন। এটা সরকারের সিদ্ধান্তের এগেইনস্টে এক কর্মসূচি। তবে ছেড়াদিয়া দ্বীপে ভ্রমণ নিষিদ্ধসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা এখনো কঠোর অবস্থান নেয়নি। আমরা নৌযান মালিক, স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের বুঝিয়ে সেখানে যেতে অনীহা তৈরীর চেষ্টা করছি। কিন্তু অনেকেই সিদ্ধান্ত অমান্য করে চলছেন।
আইনের বাস্তবায়ন না থাকায় এ ধরনের ধর্মঘট পালন হচ্ছে উল্লেখ করে কক্সবাজারের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী এম ইব্রাহিম খলিল মামুন জানান, ‘সবার উচিত আগে দ্বীপকে রক্ষা করা। সরকাররের নির্দেশনা স্থানীয় প্রশাসন সেটি বাস্তবায়ন করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। মানুষ অধিকার আদায়ে জন্য ধর্মঘট ডাকতে পারে, তাই বলে দ্বীপকে ধ্বংস মুখে ঠেলে দেওয়া যায়না। যদি দ্বীপ না বাচেঁ সেখানকার মানুষ যাবে কোথায়।’
এদিকে সেন্টমার্টিন সাধারণ বাসিন্দাদের অনেকে দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র সুরক্ষায় সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের দাবি, দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সুরক্ষা করে আমরা দ্বীপটিকে বাঁচিয়ে রেখে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি বসবাসযোগ্য দ্বীপ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। দ্বীপের পরিবেশ প্রতিবেশ বিপন্ন করে যারা শুধু বিপুল অর্থ আয়ের নেশায় সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করছে তাদের সংখ্যা কম হলেও তারা সরকারের সিদ্ধান্তকে জনগণের কাছে ভুলভবে পৌঁছাচ্ছে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপকে ব্যবহার করে এখানে আইন অমান্য করে বড়বড় দালান করে, ছেড়াদ্বীপের ইজারা নিয়ে এবং দ্বীপে অনুমতি ছাড়া সার্ভিস বোট, স্পীডবোট ও বিভিন্ন ধরনের নৌযানসহ অবৈধ ব্যবসায় বাণিজ্য পরিচালনা করে বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে তারা দ্বীপের স্বার্থবিরোধী, অথচ তারা বলছে এখন দ্বীপের স্বার্থ রক্ষার জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন। আমরা সরকারের গৃহিত পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই এবং দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।