২৭ জুলাই, ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ | ২০ মহর্‌রম, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  কলেজছাত্র মুরাদ হত্যা মামলার আসামি রহিম কারাগারে   ●  আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির প্রতিবাদে কক্সবাজার ছাত্রলীগের সমাবেশ   ●  স্বেচ্ছাসেবী কাজে বিশেষ অবদানের জন্য হাসিঘর ফাউন্ডেশনকে সম্মাননা প্রদান    ●  চতুর্থবারের মতো শ্রেষ্ঠ সার্জেন্ট নির্বাচিত হলেন রোবায়েত   ●  সেন্টমার্টিনে ২ বিজিপি সদস্যসহ ৩৩ রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলার   ●  উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ২   ●  উখিয়ায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি; কাঁচা ঘরবাড়ি, গ্রামীণ সড়ক লন্ডভন্ড   ●  উখিয়ায় কৃষি বিভাগের প্রণোদনা পেলেন ১৮০০ কৃষক /কৃষাণী   ●  আরসার জোন ও কিলিংগ্রুপ কমান্ডার আটক ৩   ●  পটিয়া প্রেস ক্লাবের নতুন কমিটি গঠিত

তিনি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীকে দেখতে সুদূর গ্রামে ছুটে গেলেন

কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্চপিয়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা সুখমনিয়া গ্রাম। এই গ্রামের নজির হোসেনের স্ত্রী রহিমা বেগম গলায় টিউমার এবং ক্যান্সার নিয়ে অসুস্থতায় ভোগছিলেন দীর্ঘদিন। কৃষক স্বামী তার। মেঝ ছেলে বাড়িতে কৃষি কাজ করে। বড়ো ছেলে এয়ারফোর্সে চাকরি করে। ছোট ছেলে মোস্তফা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পড়ে।
ছেলেরা তাদের মা’কে চট্টগ্রাম কক্সবাজারে অনেক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। ডাক্তার জানিয়েছে গলায় ক্যান্সার ধরা পড়েছে এবং এই টিউমার অপারেশন খুবই জটিল। বিদেশে নেয়ার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু তাদের বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা এবং অপারেশন করার সামর্থ্য নেই।

ছেলেরা মাকে নিয়ে গেলেন ঢাকার ন্যাশনাল ইএনটি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের প্রধান ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ও সার্জন অধ্যাপক ডা মো আবু হানিফের কাছে। তিনি রহিমা বেগমের চিকিৎসা দিলেন এবং দেড় বছর আগে রহিমা বেগমের গলার জটিল টিউমারটি অপারেশন করলেন। হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন রহিমা বেগম।

এখানেই ডাক্তারের কাজ শেষ নয়। অধ্যাপক ডা আবু হানিফ রহিমা বেগমের শারীরিক অবস্থার নিয়মিত খোঁজ খবর নিতেন। শুক্রবার ৮ এপ্রিল সকালে বিমানে করে তিনি ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারের রামুর দুর্গম সুখমনিয়া গ্রামে ছুটে গেলেন রহিমা বেগমকে দেখতে। অপারেশন পরবর্তী তার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন তা দেখলেন এবং রহিমা বেগমের সাথে তার বাড়ির উঠানে দীর্ঘ সময় কথা বললেন। তাকে একটি শাড়ি উপহার দিলেন। আলহামদুলিল্লাহ রহিমা বেগম এখন সুস্থ আছেন। তার বয়স এখন ৬২ বছর। রহিমা বেগম মুগ্ধ তাকে দেখতে এসেছেন স্বয়ং ডাক্তার যিনি তার গলার জটিল টিউমার অপারেশন করেছেন এবং ক্যান্সার মুক্ত করেছেন। রহিমা বেগমের স্বামী নজির হোসেন এবং তার ছেলে মেয়েরাও খুশী। তারা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করলেন। দোয়া করলেন এই ডাক্তারের জন্য। ডাক্তার আবু হানিফ কয়েক ঘন্টা সময় কাটালেন রহিমা বেগমের পরিবারের সাথে, আড্ডা জমালেম ছবি তুললেন গ্রামীণ পরিবেশের। তারপর ফিরে গেলেন ঢাকায়।

অধ্যাপক ডা মো আবু হানিফ জানালেন শত ব্যস্হতার মাঝেও তিনি তাঁর রোগীদের খোঁজ খবর রাখেন। বিশেষ করে তিনি যে সব রোগীর জটিল অপারেশনগুলো করেন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান তারা বাংলাদেশের যে প্রান্তেই বসবাস করুক না কেন তিনি তাদের দেখতে যান এবং রোগীর ফলোআপ করেন। তিনি তাদের উপহারও দেন। এটা তাঁর ডিউটি বলেও জানালেন তিনি। তিনি জানান দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গলায় টিউমার এবং ক্যান্সার নিয়ে তাঁর কাছে রোগীরা আসে। তিনি তাদের চিকিৎসা সেবা দেন এবং জটিল অপারেশন গুলো করেন। পরে এই রোগীদের খোঁজ খবর রাখেন ফলোআপ করেন।
যারা ভালো চিকিৎসক তাদের এই মানবিক দায়িত্ববোধ থাকা প্রয়োজন এবং বাংলাদেশের অনেক চিকিৎসক নীরবে এই দায়িত্ব পালন করেন বলে জানালেন তিনি।

সত্যিই বাংলাদেশে এমন চিকিৎসকও আছেন। রোগীর চিকিৎসা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন না। এই রোগীর ফলোআপ করেন রোগীর বাড়িতে গিয়ে দেখেও আসেন। অনেক ডাক্তার আছেন যারা দিনে রাতে রোগী দেখেন অপারেশন করেন। এক দিনেই শুধু রোগী দেখেই লাখ টাকা কামাই করেন। আবার তারা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে অপারেশন করে কয়েক লাখ টাকা কামাই করেন এক দিনেই। এ সব ডাক্তারদের রোগীর ফলোআপ করা বাড়িতে গিয়ে রোগীকে দেখে আসা কল্পনাও করা যায় না। এই সময় তো তাদের নেই।

একজন ডা আবু হানিফ একদিন ঢাকায় থেকে রোগী দেখলে এবং অপারেশন করলে কয়েক লাখ টাকা পকেটে ঢুকে।

দেশের একজন শীর্ষ নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ক্যান্সার সার্জন হয়ে অধ্যাপক আবু হানিফ তাঁর একজন রোগীকে দেখতে ঢাকা থেকে ছুটে আসলেন সুদূর গ্রামে।

একজন মানবিক ডাক্তারের পক্ষেই তা সম্ভব। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় অনেক ডাক্তারের কাছে তা সময়ের অপচয় এবং কল্পনাতীত বিষয়। একজন সাংবাদিক হিসেবে ডাক্তার আবু হানিফের মহানুভবতার দর্শনে নিজেকে গৌরবান্বিত বোধ করছি।

স্যালুট অধ্যাপক ডা মো আবু হানিফ
শুভকামনা আজীবন তাঁর জন্য।

সিনিয়র সাংবাদিক এনটিভির কক্সবাজার প্রতিনিধি একরাম চৌধুরী টিপু’র ফেইসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।