২৯ মার্চ, ২০২৩ | ১৫ চৈত্র, ১৪২৯ | ৬ রমজান, ১৪৪৪


শিরোনাম
  ●  সাগরে ১০টি বস্তায় মিলল ৭ লাখ ইয়াবা   ●  উখিয়ায় কলেজ ছাত্রকে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪   ●  মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে শহীদদের প্রতি কক্সবাজার জেলা কারাগারের বিনম্র শ্রদ্ধা   ●  উখিয়ায় মাটি ভর্তি ডাম্পার আটক   ●  কক্সবাজারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত   ●  স্বাধীনতা দিবসে মরিচ্যা উচ্চ বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি উন্মোচন   ●  পানেরছড়ায় পাহাড় ও গাছ কাটার হিড়িক, নিরব বন বিভাগ   ●  চকরিয়ায় গণহত্যা দিবসের আলোচনা সভায় এমপি জাফর আলম   ●  চকরিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড আ.লীগের ইফতার মাহফিল-আলোচনা সভায় এমপি জাফর   ●  খুটাখালী ইউনিয়ন আ.লীগের ইফতার মাহফিল, আলোচনা সভায় এমপি জাফর

ডাস্টবিনের চিরকুট

আগে যা খুশি মনে আসতো- কাগজে লিখে গোল্লা পাকিয়ে ঝুঁড়িতে ফেলে দিতাম। আর এখন ফেইসবুকে লিখে পোষ্ট করে দিই।

কাগজে লিখে ঝুঁড়িতে ফেলে দিই কিংবা ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিই। নতুবা সমুদ্র সৈকতে গিয়ে মিষ্টি গলায় সাগরের গর্জনের সাথে মিশিয়ে দিই মনের কথামালা।

কি হবে এতে?
আপতদৃষ্টিতে মনে হয়; সবই হারিয়ে যাবে।
ঝুঁড়ির গোল্লা পাকানো কাগজের চিরকুটটি হয়তো ডাস্টবিন হয়ে কোন ময়লার স্তুপে গিয়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে।
সৈকতে উচ্চারিত কথামালা হয়তো সমুদ্রের গর্জনের সাথে ভেসে ইতারে হারিয়ে যাবে।
আর ফেইসবুকের পোষ্টটি হয়তো কয়েকটি লাইক ও কমেন্টস শেষে তলানিতে পড়ে হারিয়ে যাবে।

বাস্তবে কিন্তু তেমনটি ঘটে না। তাহলে কি ঘটে বাস্তবে-

৫ বছর আগেও বার্ডস আই ভিউ পর্যন্ত বুঝতাম। এখন ওমনি ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ পর্যন্ত বুঝি। এরও আপডেট কিছু থাকতে পারে। কিন্তু আমার এখনো অজানা। বার্ডস আই ভিউ মানে একটা অবজেক্টকে পাখির মতো উপর থেকে দেখা। আর ওমনি ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ বলতে একটি অবজেক্টকে সবদিক থেকে দেখা। আমরা যা কিছু করি সবকিছুই প্রকৃতি ওমনির চেয়েও আরো সর্বাধুনিক কোন প্রযুক্তিতেই ভিডিও করে রাখেন। সেখান থেকে কোন কিছু হারিয়ে যাবার কোন সুযোগই নেই।
ধরুন- আপনি আপনার শৈশব থেকে আজকে পর্যন্ত পুরো টাইমলাইনটা একবার দেখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে চোখ বন্ধ করে চেষ্টা করুন। প্রকৃতির রেকর্ড করা ভিডিওটি সার্চ করতে থাকুন। হ্যাঁ। এতক্ষণে হয়তো পেয়ে গেছেন। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন টাইমলাইনটা দেখে দেখে। অনেকটা সিনেমার প্লে স্পীড বাড়িয়ে দেখার মতো করে। হ্যাঁ। অনেক কিছুই দেখে ফেলেছেন ইতোমধ্যে। এগুলো এখন আপনি চাইলে অন্য ডাইমেনশন থেকেও দেখতে পারবেন।
মানুষ মৃত্যুর ঠিক আগের মুহুর্তে কি দেখে জানেন? তার জীবনের পুরো ভিডিওর টাইম লাইনটাই একবার দেখেন। সেটা খুব দ্রুততার সাথেই দেখেন। তখন আমাদের দিকে কোন মনোযোগই থাকেনা মৃত্যুর পথযাত্রী মানুষের। আপনি এবং আমিও দেখবো। দেখে তখন কি ভাববো? সে অনেক কথা। আরেকদিন বলবো।

ইসলাম ধর্মেও কিন্তু উল্লেখ আছে। পৃথিবীতে আমরা যা-ই করি না কেন সব কিছুরই একদিন বিচার হবে। যদি ঝুঁড়ির গোল্লা পাকানো কাগজের চিরকুটটি ডাস্টবিন হয়ে কোন ময়লার স্তুপে গিয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়, তাহলে বিচার কিভাবে হবে? সৈকতে উচ্চারিত কথামালা যদি সমুদ্রের গর্জনের সাথে ভেসে ইতারে হারিয়ে যায়, বিচার কিভাবে হবে? আর ফেইসবুকের পোষ্টটি যদি কয়েকটি লাইক ও কমেন্টস শেষে তলানিতে পড়ে হারিয়ে যায়, বিচার কিভাবে হবে? আসলে বিচারের সময় সব কিছুই হাজির হবে। কাজেই কোন কিছুই হারিয়ে যেতে পারবে না।

মিচিও কাকুর ‘প্যারালাল ওয়ার্ল্ডস’ ও স্টিফেন হকিং এর ‘ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ এবং ‘গ্র্যান্ড ডিজাইন’ বই ৩টি পড়ে পড়ে আমি অবাক হয়ে যাই। এছাড়া অ্যালেন গুথের ‘ইনফ্লেশনারি ইউনিভার্স’, আলেকজাণ্ডার ভিলেঙ্কিনের ‘মেনি ওয়ার্ল্ডস ইন ওয়ান’, ব্রায়ান গ্রিনের ‘হিডেন রিয়ালিটি’ এবং লরেন্স ক্রাউসের ‘দ্য ইউনিভার্স ফ্রম নাথিং’ এসব বইগুলোও আমাদের ম্যাচিউরিটির জন্য চমৎকার।

এসব বিখ্যাত গবেষণা গ্রন্থগুলো অধ্যয়নের পর বুঝতে পারি। আপনার একটি চিন্তাও কিন্তু হারিয়ে যায় না। অথচ এই চিন্তাটি কি চিন্তা সেটা আপনি ছাড়া অন্য কেউ জানেও না। কিন্তু এই চিন্তা কিভাবে হারিয়ে যাবে না? অদ্ভুত ব্যাপার, তাই না? হয়তো আপনি আজকে যে চিন্তাটি করলেন, সেটি আপনি বাস্তবায়ন করতে পারলেন না। একদিন হয়তো আপনার একই চিন্তাটি আপনার সন্তান কিংবা নাতির মগজে প্রতিফলিত হবে এবং বাস্তবায়িত হবে। তাহলে আমরা একান্তে যে চিন্তা ভাবনাগুলো করি, সেগুলোও অনেক শক্তিশালী। অদ্ভুত ব্যাপার তো! হ্যাঁ, আসলেই অদ্ভুত ব্যাপার। আমরা যদি ভালো কিছু চিন্তা করি আমার সন্তান কিংবা নাতি কিন্তু সেই ভালো চিন্তাটিই বাস্তবায়ন করবেন।

এবার ভাবেন তো- ইসলাম কি বলে? ইসলাম বলে- মৃত্যুর পর সন্তানদের ভালো কাজের সওয়াব মৃত ব্যক্তির কবরে যাবে। তাহলে সন্তানদের কাজের সাথে সম্পর্কটা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন নিশ্চয়ই।

হাই স্কুলে আমরা চমৎকার একটি ইংরেজি কবিতা পড়েছিলাম। হেনরী ওয়াডসওর্থ লংফেলো’র লেখা। মাত্র বার লাইনের সেই প্রিয় কবিতাটা এখনো আমার কাছে অনেক বেশি প্রিয়। এখন সিলেবাসে আছে কিনা জানিনা। ইদানিং জীবনীমুখী লেখাগুলো সব উবে যাচ্ছে। তাই যারা কবিতাটি পাননি তাদের জন্য তুলে ধরলাম-

The Arrow and the Song

BY HENRY WADSWORTH LONGFELLOW

 

I shot an arrow into the air,
It fell to earth, I knew not where;
For, so swiftly it flew, the sight
Could not follow it in its flight.

I breathed a song into the air,
It fell to earth, I knew not where;
For who has sight so keen and strong,
That it can follow the flight of song?

Long, long afterward, in an oak
I found the arrow, still unbroke;
And the song, from beginning to end,
I found again in the heart of a friend.

হাই স্কুল জীবনে কবিতাটির অর্থ করেছিলাম এভাবে-
আমি একটা তীর ছুঁড়ে দিয়েছিলাম বাতাসে। তারপর কোথায় গিয়ে কোন অজানায় সেটা গেলো হারিয়ে। আমি একটা গান একবার গেয়েছিলাম আনমনে, তারপর সেই গানটা মিলিয়ে গেলো হাওয়াদের অদৃশ্য নগরে। তারপর বহুবছর পর কোথায় কোন এক পথের ধারে আমি দেখি আমার বাতাসে ছুঁড়ে দেওয়া তীরটিই গাঁথা আছে এক ওক গাছের বুকে। এভাবে একদিন আমি আবার শুনতে পাই এক বন্ধুর কণ্ঠে সেই পুরো গানটি যেটি মিলিয়ে গিয়েছিল ইথারে ইথারে।

আর আজকে এই কবিতাটির ভাবার্থ করার মতো কোনো জ্ঞানই খুঁজে পাচ্ছিনা নিজের ভেতর।

আর এজন্য আমি সব সময় ভালো কিছু চিন্তা করি, ভালো কিছু ভাবি, ভালো কিছু করি, ভালো কিছু লিখি। কাগজে লিখে গোল্লা পাকিয়ে ঝুঁড়িতে ফেলে দেয়া কাগজটিতেও থাকুক ভালো একটি বাক্য। যেটি হয়তো আমার ভবিষ্যত প্রজন্ম কিংবা আমার পরকালের জন্যও মঙল বয়ে আনতে পারে। সমুদ্র সৈকতে গিয়ে মুক্ত আকাশে বলবো- “হে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, তুমি এতো সুন্দর! এতো যৌক্তিক!! আর সৃষ্টিকর্তা কতো সুন্দর! কতো যৌক্তিক!!” আর ফেইসবুকের পোষ্টগুলো তো আপনারাই পড়ছেন।

আসুন, আপনিও একবার আপনার অবস্থান থেকে ভিন্নমাত্রায় চিন্তা করে দেখুন। সিরিয়াসলি বলছি- আপনার ভালো লাগবে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।