২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১০ আশ্বিন, ১৪৩০ | ৯ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫


শিরোনাম
  ●  চকরিয়ায় হাইওয়ে পুলিশের অভিযানে ইয়াবাসহ একজন আটক, মাইক্রোবাস জব্দ   ●  ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সেবার অবলম্বন পল্লী চিকিৎসক’-জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান   ●  ‘প্রয়োজনে কালো গাউন ছেড়ে রোড লেভেলে যেতে হবে’   ●  তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ করেছেন শেখ হাসিনা: কউক চেয়ারম্যান   ●  এরশাদ সরকার আমল ছিল দেশের স্বর্ণযুগ-সাবেক সাংসদ ইলিয়াছ   ●  পরিবেশ রক্ষায় শেখ হাসিনার উদ্যোগ বিশ্বে প্রশংসনীয় : মোঃ নজিবুল ইসলাম   ●  রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পাইলট-প্রকল্প মিয়ানমার-চীনের শুভঙ্করীর ফাঁকি!   ●  কক্সবাজারে ‘জয় কারাতে একাডেমী’ ‘অদ্রিতা পালদের বেড়েছে আত্মবিশ্বাস ও শক্তি’   ●  রামুতে বনবিভাগের অভিযানে পানির পাম্প জব্দ   ●  সীমান্তে গরু চোরাকারবারীদের তালিকা করে আইনের আওতায় আনা হবে-ডিসি মুহম্মদ শাহীন ইমরান

জীবন পরিচালিত হোক রমজানের শিক্ষার আলোকে

হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী: আরম্ভ হয়েছে প্রশিক্ষণের মাস মাহে রমজান। এই মাসের প্রশিক্ষণ আমাদের কাজে লাগাতে হয় সারা বছর। ইসলাম ধর্মের ইবাদতগুলো শুধু অনুষ্ঠানসর্বস্ব নয়। কারণ ইবাদত পালনের পাশাপাশি ইবাদতের মধ্যকার দর্শন ও অন্তর্নিহিত শিক্ষানুযায়ী জীবনযাপনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে ইবাদত পালনের সার্থকতা।
রমজানের পর মুসলমানরা পরিবর্তিত জীবনে ফিরে যাবে—এটাই রমজানের দাবি। কেননা রোজা নিছকই উপবাস থাকা, পানাহার ও কামাচার বর্জনের নাম নয়। এর বিশেষ তাৎপর্য ও দর্শন রয়েছে। রয়েছে এর দৈহিক, আত্মিক, নৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উপকারিতা।
মাহে রমজানের রোজা মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনে সুশৃঙ্খলভাবে চলার শিক্ষা দেয়।
হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও আত্ম-অহংবোধ ভুলে গিয়ে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী সমাজ প্রতিষ্ঠার মাসই হলো মাহে রমজান। রোজা মানুষকে পার্থিব লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরচর্চা, পরনিন্দা, মিথ্যাচার, প্রতারণা, অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখে আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়। রোজা মানুষকে আত্মনিয়ন্ত্রণ, মিথ্যাচার, মিতব্যয়িতা ও পারস্পরিক ভালোবাসার শিক্ষা দেয়।
পৃথিবীর প্রায় সব ধর্ম, দর্শন, সমাজ ও সভ্যতায় কোনো না কোনো ধরনের উপবাসব্রত পালনের নিয়ম রয়েছে। পুরাকালে কেল্ট রোমান আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয়দের মধ্যে ‘রোজার’ প্রচলন ছিল। ইহুদি, খ্রিস্টান, জরথুস্ত্র, কনফুসিয়াস, বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মেও রোজা বা উপবাসব্রত পালিত হয়। ইহুদিরা সিনাই পর্বত থেকে হজরত মুসা (আ.)-এর আল্লাহর আদেশ নিয়ে আসার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিবস পালন করে উপবাসের মাধ্যমে। কোরআন শরিফের সুরা বাকারার ৫১ নম্বর ও সুরা আরাফের ১৪২ নম্বর আয়াতে যথাক্রমে বলা হয়েছে, ‘স্মরণ করো… যখন মুসাকে আমি ৪০ রাত নির্ধারণ করে দিলাম…’ এবং ‘মুসাকে আমি ৩০ রাত নির্ধারণ করে দিলাম আর আরো ১০ মিলিয়ে তা পূর্ণ করি। এভাবে তাঁর রবের নির্ধারিত সময় ৪০ রাতে পূর্ণ হয়।’
বৌদ্ধরা বিভিন্ন চীবর অনুষ্ঠান পালন উপলক্ষে উপবাসব্রত পালন করেন। কনফুসিয়াসও বিভিন্ন ধরনের উপবাস প্রথার চালু করেছিলেন। জরথুস্ত্রবাদী পারসিকরাও নানাভাবে রোজা পালন করে থাকেন। হিন্দুদের প্রতিটি পূজায় ব্রতী পুজারি ও অনুষ্ঠান উদ্যোগী নর-নারী উপবাসব্রত পালন করেন। তাঁদের উপবাস এক দিন-দুদিন কিংবা তিন দিনের বেশি নয়। বিভিন্ন পূজা-পার্বণ ছাড়াও অমাবস্যা, পূর্ণিমা, একাদশী ইত্যাদি উপলক্ষেও তাদের উপবাস পালন করতে হয়। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কারণেও পৃথিবীর বহু মানুষ অভুক্ত ও উপবাস থাকে। অনেকে বিভিন্ন কারণে রাগে, ক্ষোভে ও অভিমানে উপবাস থাকে, পানাহার বর্জন করে।
উপমহাদেশের রাজনীতিতে এখন ‘অনশন’ কালচার যুক্ত হয়েছে। কিন্তু ইসলামের সিয়াম এসব উপবাস বা অনশনের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে না। শুধু বাহ্যিক আহারবিহার বর্জনের নামই সিয়াম সাধনা নয়; ইসলামে দেহ-মন উভয়েরই সংযমের কথা বলা হয়েছে। সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি জাগতিক সব বিষয়ে সংযত জীবনাচারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সব ধরনের পাপ ও অন্যায়-অপকর্ম থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা রয়েছে।
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘বহু রোজাদার এমন আছে, রোজার বিনিময়ে সে উপবাস থাকা ছাড়া আর কিছুই লাভ করতে পারে না।’ রমজান ইবাদতের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। কোরআনের সঙ্গে ভালোবাসা স্থাপন করে। হালাল উপার্জনের প্রেরণা দেয় এবং পরিশ্রমের মানসিকতা তৈরি করে। রমজানের এ সর্বব্যাপী শিক্ষার আলোকে সারা বছর নিজের জীবন পরিচালিত করতে না পারলে নিছকই উপবাস থাকা ছাড়া রমজানে আমাদের আর কোনো অর্জন নেই।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।