৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ৩ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  চকরিয়ায় বনের জমিতে বিএনপি নেতাদের পশুর হাট   ●  গলায় ওড়না পেঁচিয়ে উখিয়া ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী’র আত্নহত্যা   ●  যারা ক্লাসে ৭০% উপস্থিত থাকবে না তাদের পরিক্ষায় অংশগ্রহন করতে দেওয়া হবে না- শাহাজাহান চৌধুরী   ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী

জামিন বাণিজ্য ও বিচার বিক্রী বন্ধ

মাঝে মধ্যে জামিন বিষয়টি বেশ আলোচিত হয়। এখন কক্সবাজারে ও  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হঠাৎ করে আবার জামিন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। সদ্যবিদায়ী দায়রা জজের আমলে প্রায় ৯০% জামিন মজ্ঞুর করা হয়েছে,নবাগত দায়রা জজের সময় প্রায় ৯০% জামিনের দরখাস্ত নামজ্ঞুর হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে জামিন বাণিজ্য ও বিচার বিক্রীর সাথে সংশ্লিষ্ট সামান্য সংখ্যক আইনজীবী, বিক্রয় প্রতিনিধি ও দালালরা চরম অসন্তোষ্টি ও হতাশা প্রকাশ করছেন। সিংহভাগ আইনজীবী ও সাধারণ মানুষ পবিত্র আদালতের ভাবমূর্তি ও পরিবেশ ফিরে আসায়, জামিনের জন্য হাইকোর্ট এ যেতে হলেও, প্রকাশ্যে সন্তোষ্টি প্রকাশ করছেন।

নবাগত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন গত ৩ অক্টোবর বিকাল ৪ ঘটিকার সময় তাঁর সম্মেলন কক্ষে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির ৩০জন সাবেক সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকদের সাথে মত বিনিময় সভায় মিলিত হয়ে আইনজীবীদের অভিযোগ ও অসন্তোষ্টির কথা শুনে নোট নিয়েছেন এবং আইনানুগভাবে প্রতিকারযোগ্য বিষয়গুলো সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

জামিনের বিষয় বাংলাদেশে প্রচলিত ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধিতে পরিস্কারভাবে উল্লেখ আছে। ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৬ ধারা অনুযায়ী জামিনযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে আনা হলে বা পূর্ব থেকে হাজতে আটক থাকলে বা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হবে। জামিনযোগ্য অপরাধে জামিন পাওয়া আসামীর অবিচ্ছেদ্য অধিকার। ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী অজামিনযোগ্য অপরাধের ধারার মামলায় যদি আসামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপার্দ্দ করা  হয় বা আগে থেকেই হাজতে আটক থাকে বা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন তবে আদালত আসামীকে জামিনে মুক্তি দিতে পারেন। তবে যদি আসামীকে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় অপরাধে দোষী মর্মে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে তবে আদালত আসামীকে জামিনে মুক্তি দিবেন না। তারপরও শর্ত আছে যে, আসামীর বয়স ১৬ বৎসরের কম হলে, মহিলা হলে, অসুস্থ হলে বা অক্ষম হলে আদালত আসামীকে জামিনে মুক্তি দিতে পারেন। ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী দায়রা জজ আদালত বা মহামান্য হাইকোট বিভাগ নি¤œআদালতে জামিন লাভে ব্যর্থ আসামীকে উল্লেখিত শর্তে জামিনে মুক্তি দিবার নির্দেশ দিতে পারেন। প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোন আসামীকে প্রেপ্তার করা হলে বা আগে থেকে হাজতে আটক থাকলে বা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে উল্লেখিত ধারায় জামিন মজ্ঞুর করার ক্ষমতা আদালতকে আইনে দেওয়া হয়েছে।

আসামী গ্রেপ্তার হওয়ার আগেও ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় এন্টিসিপেটরী বা গ্রেপ্তারপূর্ব জামিন দেওয়ার সুপ্রীমকোর্টের সিদ্ধান্ত বা ’জাজ-মেইড’ আইন আছে। মাঝে একবার এন্টিসিপেটরী জামিনের জন্য ফৌজদারী কার্যবিধিতে ৪৯৭এ ধারা সংযোজিত হয়েছিল। তা পরে আবার বাতিল করা হয়। এখনও হাইকোর্ট বিভাগ আসামীর আত্মসমর্পণ গ্রহন করে সীমিত সময়ের জন্য এন্টিসিপেটরী বা গ্রেপ্তারপূর্ব জামিন মজ্ঞুর করে বা জামিন মজ্ঞুর না করে আসামীকে সংশ্লিষ্ট নি¤œআদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করতে নির্দেশ দেন। ১২৫ বছর পূর্বে ফৌজদারী কার্যবিধির জন্ম হওয়ার পর থেকে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৮ ধারার দরখাস্ত হাইকোর্টে বা দায়রা জজ আদালতে কিভাবে দাখিল করতে হবে,কিভাবে তা শুনানী ও নিস্পত্তি করতে হবে তার বিধিবদ্ধ নিয়ম চালু আছে। প্রচলিত আইনে সমর্থন নেই এমন কোন নতুন নিয়ম চালু করার এখতিয়ার ও ক্ষমতা অধস্থন আদালতের নাই।

১৯৮৫ সালের জানুয়ারীর ১৫ তারিখ কক্সবাজার জেলায়ও  দায়রা জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় জামিনের জন্য ফৌজদারী মিচ মামলার দরখাস্ত দায়ের করার,শুনানী করার দেশের অন্য জেলার মত একই নিয়ম চালু ছিল। নি¤œ আদালতে জামিন নামজ্ঞুর করা হলে সার্টিফাইড কপি বা সত্যায়িত অনুলিপি গ্রহন করে কোর্টফিস দিয়ে দায়রা আদালতে দরখাস্ত দাখিল করা হলে তা ফৌজদারী মিচ মামলা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে শুনানীর জন্য গ্রহন করে নি¤œআদালতের নথী তলব,প্রতিপক্ষ বা রাষ্ট্রপক্ষকে নোটিশ প্রদান করে শুনানীর জন্য একটা দিন ধার্য করা হতো। ফৌজদারী মিচ মামলা দাখিল করার দিন যদি বিশেষ কারণে অন্তবর্তীকালীন জামিনের দরখাস্ত দেওয়া হয় তা শুনানী করে মামলার গুণাগুণ বিবেচনা করে নি¤œ আদালতের নথী আসা সাপেক্ষে মিচ মামলাটি শুনানী ও নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন জামিন মজ্ঞুর করতেন বা অন্তবর্তীকালীন জামিনের আবেদন নামজ্ঞুর করে মূল মিচ মামলা শুনানীর জন্য দিন ধার্য করা হতো। হাজতী আসামীর পক্ষে টাকা খরচ করে সার্টিফাইড কপি নিয়ে আইনজীবীকে ফিস দিয়ে দরখাস্তে কোটফিস লাগিয়ে দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারী মিচ মামলা দায়ের করলে শুনানীর জন্য কোন দিন নির্ধারণ না করে ফেলে রাখা হয়, জামিন নামজ্ঞুর বা মজ্ঞুর সংক্রান্ত কোন ধরনের আদেশ পাওয়া যায় না, যা অভুতপূর্ব, নজিরবিহীন ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের জন্য বিব্রতকর । জামিন নামজ্ঞুর করলে হাইকোর্টে জামিন চাওয়ার জন্য যাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার টেক্স প্রদানকারী আসামী-নাগরিকের আছে। কিন্তু গোপনে অনেকভাবে জামিন মজ্ঞুর করা হয়,জামিন বাণিজ্য হয় তা সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ভাগ্যবান আইনজীবীই জানেন। তবে নবাগত জেলা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন আগে অবৈধভাবে বস্তাবন্দি করে রাখা শত শত ফৌজদারী মিচ মামলার শুনানীর দিন ইতিমধ্যে দিয়ে দিয়েছেন এবং শুনানী করে মজ্ঞুর/নামজ্ঞুর করছেন। জামিনাবেদন নামজ্ঞুর হওয়া আসামীরা হাইকোর্ট যাচ্ছেন। নতুনভাবে দায়ের করা ফৌজদারী মিচ মামলার পরবর্তী শুনানীর তারিখও সাথে সাথে দেওয়া হচ্ছে। জামিনের দরখাস্ত শুনানীর জন্য দিন পেতে,শুনানী করে জামিন মজ্ঞুর/নামজ্ঞুর করার একটি আদেশ  নিয়ে অস্বাভাবিক বাণিজ্য ও হয়রানী এখন বন্ধ হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। বিচার বিক্রীর কথাও এখন আর শুনা যাচ্ছে না। তবে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রত্যাশী আইনজীবী তথা আমজনতার দাবী জামিন বাণিজ্য ও বিচার বিক্রীর সাথে সরাসরি জড়িত কয়েকজন চিহিৃত কর্মচারীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত জরুরী ।

লেখক : একাধিক গ্রন্থের প্রণেতা, সাবেক পিপি ও সাবেক সভাপতি, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।