১৬ অক্টোবর, ২০২৫ | ৩১ আশ্বিন, ১৪৩২ | ২৩ রবিউস সানি, ১৪৪৭


শিরোনাম
  ●  রামুতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা রিজনের নেতৃত্বে এক ব্যক্তির দোকান দখলের অভিযোগ, চাঁদাবাজি মামলায় জিটু কারাগারে   ●  গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে হুমকি অভিযোগ ৪ এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে   ●  কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্কিলস অ্যান্ড ইনোভেশন কম্পিটিশন অনুষ্ঠিত   ●  আলোচিত ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে লুটপাট, পরে রফাদফা!   ●  দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ   ●  কক্সবাজারে ভূমি নিবন্ধনে আকাশচুম্বী বর্ধিত উৎসেকর বাতিল, প্রসংশায় পঞ্চমুখ সালাহউদ্দিন আহমদ   ●  হলদিয়ায় ইমরানের ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে উধাও ৩ যুবক   ●  দুর্ধর্ষ প্রতারক দিদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি   ●  ইয়াবাসহ পুলিশে সোপর্দ, চোর সন্দেহে চালান, এলাকায় ক্ষোভ   ●  শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান

কক্সবাজার মানবপাচার ও ইয়াবা কারবারীদের তালিকা আইজি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে

download
কক্সবাজারের সীমান্ত শহর টেকনাফ দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ইয়াবা বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে দেশে ঢুকছে। আর পাচারকৃত ইয়াবা পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, আইনজীবী, আদালতের কর্মচারীসহ বিভিন্ন পেশার গুরুত্বপূর্ণ লোকজনের সমন্বয়ে গড়ে উঠা সিন্ডিকেট ছড়িয়ে দিচ্ছে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও রাজধানীকে ঘিরে সক্রিয় এই ইয়াবা সিন্ডিকেট। ইতিমধ্যে পাচারে জড়িত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অন্যদের একটি তালিকা গায়েন্দাদের হাতে এসেছে। গত কয়েকদিন ধরে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে কক্সবাজারের অনেক রাঘববোয়ালের নাম প্রেরণ করেছে পুলিশ হেডকোয়াটার্সসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে। এতে চকরিয়া থানার ওসি ও এসআইসহ জেলার কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিসহ আরো অন্তত ৪৫ জনের নাম স্থান পেয়েছে।
সংশি¬ষ্টরা বলছেন, ইয়াবাসহ মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ করা যাদের কাজ, সেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই এই কাজে জড়িত থাকায় ইয়াবা পাচার রোধ করা যাচ্ছে না বলেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উলে¬খ করা হয়।
সূত্র জানায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ঘাটে ঘাটে বখরা দিয়ে ইয়াবার অনেক চালান সীমান্ত এলাকা থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকছে। সর্বশেষ গত ২০ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লালপুর এলাকায় এলিয়ন প্রাইভেটকারসহ এসবির এএসআই মাহফুজুর রহমানকে সাত লাখ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়।
এএসআই মাহফুজের গাড়িতে ১৫ কোটি টাকার ইয়াবা ধরা পড়ার পর এ অপকর্মে জড়িত পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার নামও বেরিয়ে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্য মতে, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে গুরুত্বপূর্ণদের মধ্যে আছেন, কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই বিল¬াল হোসেন, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, সীতাকুণ্ডের কুমিরা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত সাবেক (বর্তমানে কুমিল¬া হাইওয়ে পুলিশে) এএসআই আশিক হোসেন, মুহুরি আব্দুল মোতালেব, ঢাকার এসবির টেকনিক্যাল সেকশনের এএসআই মাহফুজুর রহমান,কনস্টেবল কাশেম,গোয়েন্দা শাখার ওসি দেওয়ান আবুল হোসেন, এসআই ইমন চৌধুরী, এসআই কামাল আব্বাস, এসআই আমির, এসআই আশিক, এএসআই আনিছ, চকরিয়া থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ও এসআই সাহাদাত হোসেন, কক্সবাজার সদর মডেল থানার কলে¬াল চৌধুরীসহ জেলার আরো অন্তত ৪৫ জনের নাম স্থান পেয়েছে। ইয়াবা ও মানবপাচারের তালিকায় শীর্ষ কর্মকর্তারা পার্সেন্টিস আকারে টাকা নিতো বলেও উলে¬খ করা হয়। এ ধরনের গোয়েন্দা তালিকা পুলিশ হেডকোয়াটার্সসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে বলে সুত্রে প্রকাশ। একজন সহকারী পুলিশ সুপার ও এসপি পদমর্যাদার কয়েক কর্মকর্তা ইয়াবা পাচারে জড়িত থাকার তথ্য গোয়েন্দারা পেয়েছেন। বিষয়টি আরও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সূত্র মতে, মাহফুজুরকে আটকের পর তার কাছে থাকা তিনটি নোটবুকের তথ্য সমন্বয় করে ইয়াবা নিয়ে টাকা লেনদেনের একটি তালিকা করে উদ্ধার করে র‌্যাব। ওই তালিকা অনুযায়ী গত তিন মাসে ইয়াবা ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন সিন্ডিকেট সদস্য মুহুরি আব্দুল মোতালেব। তিনি পেয়েছেন ২০ কোটি ৩৭ লক্ষ ৪ হাজার টাকা। কনস্টেবল গিয়াস পেয়েছেন এক কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই বিল¬াল পেয়েছেন এক কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। তোফাজ্জল হোসেন নামে একজন পেয়েছেন এক কোটি ৫০ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা।
অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন পেয়েছেন ৬৩ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। এসআই আশিক হোসেন পেয়েছেন ৪৬ লক্ষ টাকা। কাশেম নামে একজন ৪৩ লক্ষ ৪০ হাজার, আজাদ নামে একজন ৬ লক্ষ টাকা, মামা গিয়াস ৬৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, গোবিন্দ দাদা ৪ লক্ষ টাকা, সেলিম ৩৮ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা, শাহিন ৮ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা, জনৈক এসআই আমিরের বন্ধু ৪ লক্ষ ১০ হাজার টাকা, কুমিল¬ার জনৈক মামা হান্নান পেয়েছেন ২১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। এ হিসেবে গত তিন মাসে ওই সিন্ডিকেট ২৮ কোটি ৪৪ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা ইয়াবার জন্য লেনদেন করেছেন। সূত্র জানায়, সিন্ডিকেটের সদস্যরা টাকা দিতেন গ্রেফতার হওয়া এএসআই মাহফুজুরের হাতে। তিনি টাকা নিয়ে যেতেন কক্সবাজারে। সেখানে এসআই বেলালের হাতে টাকা দিত। বেলাল মিয়ানমার থেকে টেকনাফ দিয়ে ইয়াবাগুলো নিয়ে আসত। বিল¬ালের কাছ থেকে মাহফুজুর সেগুলো ঢাকায় নিয়ে খুচরা ও পাইকারি ইয়াবা বিক্রেতাদের হাতে তুলে দিত। বিক্রির টাকা সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভাগ করে নিতেন।
সূত্র মতে, গ্রেফতারের পর মাহফুজুর আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। ওই দিন ইয়াবাগুলো সে কক্সবাজারের বাহারছড়ায় সার্কিট হাউজ রোডে ১৫২ নম্বর হাজী আমির ম্যানশনের ভাড়াটিয়া ডিবির এসআই বিল¬ালের বাসা থেকে গাড়িতে তুলেন। প্রতিবারই সে বিল¬ালের বাসা থেকেই ইয়াবা সংগ্রহ করত। পুলিশ কর্মকর্তার বাসা হওয়ায় তাদের কেউই সন্দেহ করত না বলে মাহফুজুর র্যাবকে জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, মাহফুজুর, এসআই বেলাল ও এএসআই আশিক একসময় কক্সবাজারের টেকনাফে কর্মরত ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তারা স্থানীয় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে যুক্ত হন। পরে মাহফুজুর, আশিক ও বিল¬াল মিলে আরও কয়েকজনকে যুক্ত করে নিজেরাই একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন ইয়াবা ব্যবসার বিশাল কারবারি চক্র।
এদিকে চকরিয়া থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র দাবি করেন, আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি, যদি কেউ উপরোক্ত অভিযোগের বিষয়ে তথ্যবহুল প্রমাণ এবং গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক ইতিপূর্বে তৈরি করা তালিকায় যে সকল পুলিশ ইয়াবা বা মানব পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে সেই তালিকায় যদি আমার নাম থাকে তাহলে আমি স্বেচ্ছায় পুলিশের চাকরি থেকেও ইস্তফা দেবেন বলে ঘোষনা দেয়।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।