৫ অক্টোবর, ২০২৪ | ২০ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১ রবিউস সানি, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  কক্সবাজারে কিশলয়ে শিক্ষক গ্রুপিংয়ে শ্রেণী কার্যক্রমে স্থবির    ●  সাবেক সাংসদ জাফর ও সালাহ উদ্দিনসহ ৩৫জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ৪   ●  ইয়াবা সম্রাট বদির আরেক সহযোগী সি-লাইন বাদশা গ্রেপ্তার   ●  রামুতে বিএনপির নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর মামলায় সৈনিকলীগ নেতা গ্রেফতার   ●  আগামি দিনের রাজনীতি হবে খালেকুজ্জামানের দেখানো পথে   ●  কক্সবাজারে বৃক্ষমেলায় ৩৫ লক্ষ টাকার চারা বিক্রি     ●  কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র এডমিশন ফেয়ার উদ্বোধন   ●  কক্সবাজারে বিডিআর কল্যাণ পরিষদের স্মারক লিপি   ●  উখিয়ায় টমটম মালিক সমিতির নতুন কমিটি: সভাপতি আনোয়ার সিকদার, সাধারণ সম্পাদক টিপু   ●  আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কার পেল সায়মন বিচ রিসোর্ট ও সায়মন হেরিটেজ

ঈদ সামনে রেখে বেপরোয়া মাদক কারবারিরা

বাংলা ট্রিবিউনঃ ঈদকে সামনে রেখে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক-কারবারিরা। চড়িয়ে দিচ্ছে দেশব্যাপী মাদক। এদিকে, সমাজকে মাদকমুক্ত করতে দেশব্যাপী নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানের ফলে সড়কপথে প্রতিরোধের মুখে পড়ে নৌ-পথ ও আকাশ পথে মাদকের চালান নিয়ে আসছে কারাবারিরা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদকবিরোধী অভিযান চালানোর সময় গত একবছরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৪৮০ জন মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। আর আত্মসমর্পণ করেছে তিন শতাধিক মাদক কারবারি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়া ছাড়াও আত্মসমর্পণের পর  কিছুদিন মাদক-কারবারিদের তৎপরতা বন্ধ থাকলেও চলতি মাসে আবারও বেপরোয় ওঠে তারা।
গত ২৩ মে ভোরে মুগদার গোপীবাগ এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যানে (চট্টগ্রাম মেট্রো-অ ১১-০২৯০) তল্লাশি করে ২ হাজার ৩২৪ ক্যান বিয়ার এবং ১৭৮ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদসহ মো. সেকেন্দার নামে একজন মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩।

গত ২৪ মে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, উত্তরা পূর্ব ও টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকার পৃথক পৃথক মাদক স্পটে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৬০০ ইয়াবা ট্যাবলেট, ৩৫০ গ্রাম হিরোইন উদ্ধারসহ ৬ মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-২।

একইদিন বিকালে রাজধানীর হাতিরঝিল থানাধীন বড় মগবাজার চৌরাস্তা এলাকা থেকে ৯০০ বোতল ফেনসিডিলসহ ২ জন মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা পশ্চিম বিভাগ।

২৭ মে রাতে সবুজবাগ থানাধীন অতীশ দীপংকর রোড এলাকা থেকে ২২ কেজি গাঁজা ও ৭০০ গ্রাম হেরোইনসহ মাসুদ মিয়া নামে একজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ।  গত ২৮ মে রাতে গাজীপুর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন মরকুন টিএন্ডটি বাজার এলাকায় একটি কাভার্ডভ্যান থেকে ৫০ কেজি গাঁজাসহ আন্তঃজেলা মাদক বিক্রেতা চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১।

বাংলা ট্রিবিউন অনলাইন নিউজ পোর্টালের রিসার্চ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৫ মে থেকে ২০১৯ সালের ৫ মে পর্য্ন্ত গত একবছরের সারাদেশে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৪৮০ জন মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি অনুযায়ী, এরমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পুলিশের সঙ্গে ২৩৭ জন, র‌্যাবের সঙ্গে ১১২ জন, ডিবি পুলিশের সঙ্গে ১৩ জন, বিজিবি’র সঙ্গে ১০ জন, সুস্পষ্ট করে কোনও বাহিনীর কথা উল্লেখ নেই, এমন ‘বন্দুকযুদ্ধে’  নিহত হয়েছে ৪ জন। এই হিসাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে মোট নিহতের সংখ্যা ৩৭৬ জন। এছাড়া মাদক কারবারিদের নিজেদের মধ্যে সংঘটিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ১০৪ জন।

এদিকে, মাদবাধিকার সংস্থা—আইন ও শালিস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে ২০১৯ সালের ৫ মে পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৩৪৮ জন মাদক কারবারি নিহত হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ১ লাখ ২৫ হাজার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে ১ লাখের বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ৩২ কোটি পিস ইয়াবা। আর মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ২৩৭ জন মাদক কারবারি নিহত হয়েছে।

‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়া ছাড়াও একের পর মাদক কারবারিদের আত্মসমর্পণের পরও কেন কমছে না মাদকে ছোবল—এমন এক প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও শালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজ বলেন, ‘মাদক পাচার ও কারবার সংশ্লিষ্ট যারা আসল অপরাধী, তাদের যদি ধরা না যায়, তবে মাদকের পাচার কমবে কীভাবে?’

শীপা হাফিজ বলেন, ‘যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তাদের মধ্যে সবাই মাদক পাচারকারী নাও হতে পারে। বিভিন্ন রকম লোক বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে মাদকের নামে নিজেরা আত্মসমর্পণ করেছে। এদিকে, যারা প্রকৃত মাদক কারবারি, তারা যে আত্মসমর্পণ করেছে, তারও কোনও নিশ্চিয়তা জনগণ জানে না। এছাড়া মাদকের নামে বেআইনিভাবে যাদের হত্যা করা হলো, সেখানেও একই কথা রয়েছে যায়। মাদকের সঙ্গে তাদের কতখানি সংশ্লিষ্টটা ছিল, এ বিষয়ে কোনও সুষ্ঠু তদন্ত নেই। আদৌ তারা মাদক কারবারি ছিল কি না, সে ব্যাপারেও জনমনে সন্দেহ রয়ে গেছে। জনগণ শুধু জানে, মাদকের নামে কতজনের মৃত্যু হলো আর কতজন আত্মসমর্পণ করেছে।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের দাবি, দেশজুড়ে অভিযানের ফলে আগের চেয়ে মাদকের প্রবাহ কিছুটা কমেছে। এখন প্রকাশ্যে কেউ মাদক কেনা-বেচা করতে পারছে না।

এই প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘এখন আর আগের মতো কেউ প্রকাশে মাদক কেনাবেচা করতে পারে না। তবে, মাদক কেনা-বেচার সুনির্দিষ্টভাবে পেলে আমরা আবারও অভিযান পরিচালনা চালাবো। যে করেই হোক, মাদক নির্মূল করতে হবে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দফতর সূ্ত্রে জানা গেছে, গত ৭ মে থেকে ২৬ মে পর্যন্ত রমজানের ২১ দিনে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে মাদক রাখা ও সেবনের দায়ে ১ হাজার ২৬২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৭৯ হাজার ৭৭০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৯ কেজি গ্রাম ৫৩ গ্রাম হেরোইন, ২১৩ কেজি ৭০৮ গ্রাম গাঁজা, ৪ হাজার ৯৮৭ বোতল ফেনসিডিল, ৯২ বোতল বিয়ার ও ৩৯৪টি ইনজেকশন উদ্ধার করা হয়।

ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা জানান, শুধু অভিযান দিয়েই মাদক নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। এজন্য মাদকবিরোধী সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। একইসঙ্গে যারা মাদকাসক্ত, তাদের এই  আগ্রাসন থেকে বের করে আনতে হবে। এজন্য প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে পরিবারকে। মাদকের চাহিদা ঠিক রেখে তার জোগান কমিয়ে দিলে মাদক নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। যারা মাদকাসক্ত, তারা সময়মতো মাদক না নিতে পারলে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত পড়তে পারে। এতে অপরাধীর সংখ্যা বাড়বে কিন্তু মাদক নিয়ন্ত্রণে আসবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য (ডিবি) বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম  বলেন, ‘সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে হলে প্রথমেই এর আগ্রাসন থেকে মাদকাসক্তদের বের করে আনতে হবে। সেটা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হোক বা  চিকিৎসার মাধ্যমে হোক। এটা সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। যদি মাদকাসক্তদের সংখ্যা কমে, তবে এমনিতেই মাদক নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।’

র‌্যাব সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে ২০১৯ সালের ৮ মে পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ২৪ হাজার ৮৯৮জন মাদক কারবারি ও মাদকসেবীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময়ে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১০৫ জন মাদক কারবারি নিহত হয়। এসব অভিযানে ১ কোটি ৬ লাখ ৫ হাজার ৬৪ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৫ হাজার ৫৯ কেজি ৪৩০ গ্রাম গাঁজা, ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৯৫ বোতল ফেনসিডিল, ২৯ কেজি ৫৮২ গ্রাম হেরোইন, ৯ হাজার ৩৪১ লিটার বিদেশি মদ, ২০ লাখ ৬ হাজার ৪৮০ লিটার দেশি মদ, ৪৭ হাজার ৩৩০ ক্যান বিয়ার ও ১৫ হাজার ১৩৫ পিস নেশা জাতীয় ইনজেকশন উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমার্ডার মুফতী মাহমুদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে মাদকের ব্যবহার রয়েছে। শতবছর আগেও মাদকের ব্যবহার ছিল, এখনও আছে। মাদককে একেবারে জিরো-তে নিয়ে যাওয়া দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। তবে মাদক নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।’

দেশে কোনও মাদক উৎপাদন হয় না উল্লেখ করে মুফতী মাহমুদ খান বলেন, ‘বিভিন্ন দেশ থেকে মাদক আমাদের দেশে আসে।’ মাদক নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।