১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ২ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৩ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬


ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১২ জনের নামে চাঁদাবাজি মামলা, গ্রেফতার ১

greptar
কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার আব্দুল কাদেরসহ ১২ জনের নামে চাঁদাবাজি  মামলা হয়েছে। কুলছুমা আক্তার নামে এক মহিলা গত ১০ মার্চ কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং জিআর-২৫। মামলায় বাদি নিজেকে ‘হিরা ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন ইন্ডাস্ট্রিজ’ এর মালিক দাবী করেছেন। মামলায় বাদীর কাছ থেকে বিশ লাখ টাকা চাঁদা দাবীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ দিকে এ মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী ইসলামপুর ধর্মেরছরা এলাকার মৃত হাজী সোলতান আহমদের পুত্র মনজুর আলম নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ১০ মার্চ মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে তাকে নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এতে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গ্রেফতারকৃত একজন ছাড়া আরো ১০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামপুর লবনমিল মালিক সমিতি, বাংলাদেশ লবনমিল মালিক সমিতি ও লবনমিল নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এর তালিকায় ‘হিরা ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন ইন্ডাস্ট্রিজ’ এর কোন মিলের অস্তিত্ব খোঁজে পাওয়া যায়নি।
এরপরও ভুঁয়া লবনমিলের মালিক সেজে একজন জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জড়িয়ে মামলা করায় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে বিস্মিত করেছে।
বিসিক সুত্র জানিয়েছে, ইসলামপুর লবন শিল্প এলাকায় বিসিকের তালিকাভুক্ত ৪৫ টি লবন মিল রয়েছে। এতে ‘হিরা ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামে অনুমোদিত কোন লবন মিল নেই।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) কক্সবাজারের কর্মকর্তা এনামুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারাদেশের সব লবনমিল বিসিকের আওতাভুক্ত। এর বাইরে কোন মিল থাকার সুযোগ নেই। একটি লবনমিল প্রতিষ্ঠা করতে একবার অনুমোদন এবং আয়োডিন মেশিন নিতে আরেকবার অনুমোদন বাধ্যতামূলক। এ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে কেউ লবন মিল প্রতিষ্টা করলে তা আইনগত অপরাধ।
একই বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে ইসলামপুরে ‘হিরা ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামে কোন মিলের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। আইনের বাইরে গিয়ে কেউ কাজ করলে তাকে উপযুক্ত শাস্তি পেতে হবে।’
সুত্রে জানা গেছে, ইসলামপুর শিল্প এলাকায় স্থাপিত ‘গ্রামীণ সল্ট ইন্ডাষ্ট্রিজ’ মোহাং তৈয়ব নামের এক ব্যক্তির। তবে মিলটি দীর্ঘ দিন যাবত বন্ধ ছিল। পরে বন্ধ অবস্থায় স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরকে চুক্তিনামা মূলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মিলটির ভাড়া দেন মিল মালিক মোহাং তৈয়ব।
এরপর একজন অংশীদার পরিচালক হিসাবে মিলটি চালু করেন ভাড়াটিয়া পক্ষ। কিন্তু দীর্ঘ দিন পরে মিলটি চালু হওয়ায় এটি অবৈধভাবে দখলের পাঁয়তারার শুরু করে মালিক পক্ষ। এ কারণে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে কক্সবাজার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে গত ২ ফেব্রুয়ারী অপর-৪৬/২০১৫ মামলা দায়ের করেন মাস্টার আব্দুল কাদের। মামলা শুনানী শেষে বিজ্ঞ আদালত মিলের মালিক মোহাং তৈয়ব, ম্যানেজার রশিদ আহমদ, লেবার সর্দার আমিন মাঝি, দারোয়ান আবছার ও মিলের কার্যকারক আবদু শুক্কুরের বিরুদ্ধে ৩ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং ১১ ফেব্রুয়ারী অন্তবর্তীকালীণ নিষেধাজ্ঞা জারী করেন। কিন্তু আদালতের এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মালিকপক্ষ ভাড়াটিয়া লোকজন জড়ো করে অবৈধ উপায়ে মিলটি দখলে নেয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান মাস্টার আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ইছাখালী এলাকার ফজুর পুত্র আইয়ুবসহ জিডিতে উল্লেখ করা ব্যক্তিরা অবৈধ উপায়ে মিল দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে গত ৮ মার্চ কক্সবাজার সদর থানায় জিডি করেছি। জিডি নং-৩৯৩।’
তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ সল্ট ইন্ডাষ্ট্রিজ’ এর নামে মামলা থাকায় আদালতকে ফাঁকি দিতে রাতারাতি ‘হিরা ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামকরণ করেছেন মিল মালিক তৈয়ব। এটির নতুন মালিক দেখিয়েছেন তার মেয়ে কুলসুমাকে। অথচ ইসলামপুরে ৪০টি লবনমিলের মধ্যে ‘হিরা সল্ট’ নামের কোন মিলের অস্তিত্ব নেই।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাং তৈয়ব বলেন, ‘গ্রামীণ সল্ট ইন্ডাষ্ট্রিজ’ আমার নামে। আর ‘হিরা সল্ট’ আমার মেয়ে কুলসুমার নামে অনুমোদন নেয়া হয়েছে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।