২৭ জুলাই, ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ | ২০ মহর্‌রম, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  কলেজছাত্র মুরাদ হত্যা মামলার আসামি রহিম কারাগারে   ●  আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির প্রতিবাদে কক্সবাজার ছাত্রলীগের সমাবেশ   ●  স্বেচ্ছাসেবী কাজে বিশেষ অবদানের জন্য হাসিঘর ফাউন্ডেশনকে সম্মাননা প্রদান    ●  চতুর্থবারের মতো শ্রেষ্ঠ সার্জেন্ট নির্বাচিত হলেন রোবায়েত   ●  সেন্টমার্টিনে ২ বিজিপি সদস্যসহ ৩৩ রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলার   ●  উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ২   ●  উখিয়ায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি; কাঁচা ঘরবাড়ি, গ্রামীণ সড়ক লন্ডভন্ড   ●  উখিয়ায় কৃষি বিভাগের প্রণোদনা পেলেন ১৮০০ কৃষক /কৃষাণী   ●  আরসার জোন ও কিলিংগ্রুপ কমান্ডার আটক ৩   ●  পটিয়া প্রেস ক্লাবের নতুন কমিটি গঠিত

আদালত পরিবর্তনে খালেদার আবেদনের শুনানি অবকাশের পরে

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালত পরিবর্তন ও বিচারিক আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিত চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আবেদনের শুনানির দিন ফের পিছিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটির পরে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

অবকাশকালীন ছুটি শুরু হচ্ছে ১৭ মার্চ আর শেষ হবে ৩১ মার্চ। ছুটি শেষে ১ অথবা ২ এপ্রিল শুনানি শুরু হতে পারে বলে জানান আদালত।
বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) শুনানির দিন ধার্য থাকলেও তা পিছিয়ে দেন বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ। এর আগে গত ৫ মার্চ শুনানির দিন পিছিয়ে বৃহস্পতিবার ধার্য করা হয়েছিল। আর ২ মার্চ শুনানির দিন ৫ মার্চ ধার্য করে দেন আদালত।

বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ শুনানি নেবেন। বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের স্থলে বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী এজলাসে বসেন। এ বেঞ্চটিও আর এক কার্যদিবস আদালত পরিচালনার পর আগের ফরমেটে ফিরে যাবে। এজন্য শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়।

আদালত বলেন, আমরা আজ শুনতে পারবো না। এই বেঞ্চ এক দিনের জন্য আছে। আদালত খোলার পর বিষয়টি শুনানির জন্য আসবে। পরে খালেদার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন একটি দিন ধার্যের আবেদন জানালে আদালত বলেন, খোলার পর বিষয়টি ১ বা ২ এপ্রিল কার্যতালিকায় আসবে।

গত ২৮ জানুয়ারি বিচারিক আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে আদালত পরিবর্তনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদার আইনজীবীরা। পরে এ আবেদনের সম্পূরক হিসেবে বিচারিক আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিত চেয়েও আবেদন জানানো হয়। আবেদনে দুর্নীতি মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়। এ রুল বিচারাধীন থাকাকালে গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিত চেয়েছেন আসামিপক্ষ।

খালেদার আইনজীবীরা জানান, একই দিনে সব আবেদনের শুনানি করবেন তারা।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ওই দুই দুর্নীতি মামলার বিচার চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে।

শুনানিতে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। অন্য দু’জন হচ্ছেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।

গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার, আদেশ সংশোধন ও জামিন বহাল রাখতে খালেদার আবেদনের শুনানি শেষে গত ৪ মার্চ গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল রেখেছেন বিচারিক আদালত। খালেদার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণসহ মামলা দু’টির কার্যক্রম আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আদালত।

ওইদিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার দ্বিতীয় সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করার কথা। এর আগে এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদ।

৪ মার্চের আদেশে মামলাটির অপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দেওয়ার অনুমতিও দিয়েছেন আদালত। ছয় আসামির অন্য দু’জন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

নানা কারণ দেখিয়ে মামলা দু’টির শুনানির জন্য নির্ধারিত ৬৫ কার্যদিবসের মধ্যে ৫৮ কার্যদিবসই অনুপস্থিত থেকেছেন খালেদা জিয়া, হাজির হয়েছেন মাত্র ৭ দিন। কোনো আসামিই আদালতে না থাকায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদকে আসামিপক্ষের জেরাও বাতিল করেছেন আদালত। তবে পরবর্তী ধার্য তারিখ ৫ এপ্রিল তারেক রহমানের পক্ষে এ সাক্ষীকে জেরার সুযোগ নিতে পারবেন তার আইনজীবী।

গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশে আইন মন্ত্রণালয় এ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়ের বদলে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ হিসাবে নিয়োগ দেয় আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু আহমেদ জমাদারকে। আগের বিচারকের প্রতিও অনাস্থা জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানানো ছাড়াও তার আদালতে বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে এজলাসকক্ষেই বিশৃঙ্খলা ও হই-হট্টগোল এবং বিচারকের প্রতি কটূক্তি করে আসছিলেন খালেদার আইনজীবীরা।

এ পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির পরামর্শে বিচারক বদল করা হয়।

গত বছরের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি মোট ছয়জন। অন্য দু’জন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

দুই মামলারই বাদী হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

গত বছরের ১৯ মার্চ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।

সূত্র বাংলানিউজ

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।